Sunday, April 20, 2025
Sunday, April 20, 2025

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিন

খাদিজাতুল কুবরা। প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২০

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর জীবনে বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বপ্নের জায়গা। বহু প্রতীক্ষা ও সংগ্রামের পর একজন শিক্ষার্থী সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর সৌভাগ্য অর্জনে সক্ষম হয়। তেমনি সৌভাগ্যবানদের মধ্যে আমি একজন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

অন্য শিক্ষার্থীদের মত আমার জন্যও বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো রুপকথার গল্পের মতো অস্পষ্ট, কাল্পনিক। প্রথমবার চান্স না পাওয়ায় আমি পুরোপুরি হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে আমার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীর অনুরোধে আবারও সংগ্রামে নেমে পড়ি। পণ করি যত পরিশ্রমই হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বোই। 

এরপর আমার ওপর দিয়ে গেছে অনেক বাধা বিপত্তি, মানসিক চাপ, পরিবারের অনিচ্ছা। সব সত্ত্বেও দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দিলাম শুধু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলো, তবে আমার মেধাক্রম আমাকে হতাশ করে দিলো। ওয়েটিং থেকে চান্স পাব এই আশাটাই ছিলো না। 

হঠাৎ একদিন ডাক পড়লো। সেদিন জানুয়ারীর ২২ তারিখ। ক্লাস ২১দিন আগে থেকে চলছে। অর্থাৎ প্রথমদিনের সুন্দর অনুভূতি অনুভব করার অবকাশ পায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে যখন প্রথম পা দিলাম আমার বাবা ছিলেন আমার সাথে। উনি আমার গতি রোধ করে ৫ মিনিট দাঁড়াতে বললেন। আমার ডান হাত ধরে বললেন, “তোমাকে তোমার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে দিলাম। এখান থেকে তুমি চাইলে স্বাধীনতার অপব্যবহার করে জীবন ধ্বংস করতে পার। আবার চাইলে সর্বোচ্চ সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিজেকে পৌঁছে দিতে পারো।” এরপর প্রবেশ করলাম ক্যাম্পাসের ভিতরে। 

একটা সুন্দর অনুভূতি, আবেগ ও উৎকন্ঠা আমার মধ্যে খেলে গেল। চারদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। কেউবা গানের আড্ডায় মেতেছে কেউবা বিভিন্ন কাজে ছুটছে। সবার ভেতরেই যেনো প্রাণ ভরপুর! তবে এর মধ্যেও আমার বেশ খারাপ লাগছিল আমার প্রিয় জায়গা ও আপনজনদের ছেড়ে আসতে হবে ভেবে। তারপর শুরু হলো ভর্তি নিয়ে দৌড়ঝাপ!

দেরিতে ভর্তি হওয়ার কারণে প্রথম দিনই তাড়াহুড়ো করে ভর্তি হওয়া লাগলো। এই দৌড়ঝাপ এর ভেতরেও মনের ভেতর একটা প্রশান্তি ও ভালোলাগা ছিল। প্রথম যেদিন ক্লাসে ঢুকেছিলাম সেদিন বেশ অস্বস্তিতে ছিলাম। সবার মাঝে নিজেকে ভীন গ্রহবাসী লাগছিল। তবে আমার ব্যাচমেটদের বন্ধুসুলভ আচরণ আমাকে সহজ হতে সাহায্য করেছিল। তারা আমাকে সাদরে অর্ভ্যথনা জানাল। ক্লাস শুরু হলে যথাক্রমে শিক্ষকদের সাথে পরিচিত হলাম। তাদের অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল ব্যবহার আমাকে আরও সহজ হতে সাহায্য করেছিলো।

এভাবে প্রথমদিনটি কেটে গেল। তবে দিনটি বিভিন্ন ঝামেলার ভেতরে কাটলেও একটি নতুন স্বপ্ন আশা কৌতূহল উচ্ছ্বাস মিলেমিশে একাকার হয়ে একট পৃথক সুন্দর অনুভূতির সঞ্চারণ করেছিল। প্রথম দিনের অনুভূতি আমার একটু ভিন্ন হলেও দিনটি আমার জীবনের নতুনত্বের একটি ছবি হয়ে আজীবন স্মৃতির অ্যালবামে অম্লান হয়ে থাকবে!

আরও পড়ুন