খুবি যেখানে অনন্য
রুবায়েত হোসেন | প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২০

দেশের বাকি প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ছাত্ররাজনীতি চলমান। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটছে দিনের পরদিন রাজনৈতিক সহিংসতা, ছাত্র সংঘর্ষ, হানাহানি, মারামারির মত বহু সংখ্যক ঘটনা।
অনেক সময় ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে ক্যাম্পাস। দিনের পর দিন বন্ধ থাকছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সেখানে ব্যতিক্রম শুধু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই ঘটুক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় চলছে তার নিজস্ব গতিধারায়।
উদ্ভাবনী, গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নজিরবিহীন সাফল্য অর্জন করা এবং দেশের সর্বপ্রথম ছাত্ররাজনীতিমুক্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী এক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।
ছাত্ররাজনীতিমুক্ত হওয়ায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক হানাহানির চেয়ে বরং উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনীর ক্ষেত্রে আছে অনেক এগিয়ে। বিজ্ঞান গবেষণার ওপর ভিত্তি করে টানা দুই বছর আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে জায়গা করে নিয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)। টানা দুই বছর দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শুরুতে ৪ টি ডিসিপ্লিনের ৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। তৎকালীন উপাচার্য ড. গোলাম রহমান শিক্ষার্থীদের দাবির কারণে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। সেই সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সর্বপ্রথম ছাত্ররাজনীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। এরপর থেকে এখানে অপ্রীতিকর কর্মকাণ্ড বা রাজনৈতিক সহিংসতার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি।
প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরেও ঘটেনি কোন সংঘর্ষ। বছরের প্রথম দিন থেকেই ক্লাস শুরু হয়। এছাড়া সকল শিক্ষা কার্যক্রম একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে থাকে। শুরু থেকেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের সেশন জট নেই। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সকল একাডেমিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক সময় সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ও বলা হয়। এখানে ছেলেমেয়েদের সংস্কৃতি চর্চার জন্য রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ টিরও বেশি সংগঠন যার সবকটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত। সংগঠনের অনুষ্ঠানগুলোতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি প্রতিবছর বিভিন্ন মৌসুমভিত্তিক টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এছাড়া পহেলা বৈশাখ, পিঠা উৎসব, বসন্তবরণ ইত্যাদি উৎসবগুলো জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয় না।
খুলনার সবচেয়ে বড় পহেলা বৈশাখের উৎসব হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেদিন এ অঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে এখানে ভীড় জমায় বৈশাখ উদযাপনের জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান র্যাগ। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় অন্য একটা রূপ ধারণ করে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় র্যাগের অনুষ্ঠান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েই হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেখানে সিনিয়র – জুনিয়র সম্পর্ক এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এছাড়া এখানে ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্কও অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা ও উদ্ভাবনীর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের মধ্যে একটা বিরল উদাহরণ। গবেষণার ক্ষেত্রেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক এগিয়ে।
ছাত্ররাজনীতি না থাকলেও এখানকার শিক্ষার্থীরা সবসময় রাজনীতি বিষয়ে সচেতন। মাঝেমাঝে বিভিন্ন ধরনের জাতীয় ইস্যু বা সব ধরনের অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবসময় কঠোর অবস্থানে থাকে। মানববন্ধন, পথনাটক, আন্দোলন ইত্যাদির মাধ্যমে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যায়ের প্রতিবাদে কঠোর থাকে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আইন ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল বাকি বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমি কখনও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হই নি বা চোখে পড়েনি। হল কিংবা ক্যাম্পাসের কোথাও কোন শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় না। সবার মধ্যে একটা সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান।’