প্রতিষ্ঠার ৩২ বছরেও ছাত্র রাজনীতি মুক্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
সায়মা আক্তার এশা | প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২২

দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতির নামে মারপিট, খুন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হানাহানির ধারা চলে আসছে। সম্প্রতি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যু তারই আরেক নৃশংস উদাহরণ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) এদিক থেকে ব্যতিক্রমী। শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো নিজস্ব রাজনৈতিক ফোরাম নেই। নেই কোনো দলীয় নেতা। উপস্থিতি নেই টেন্ডারবাজিরও। অথচ তারা রাজনীতি ও সমাজ সচেতন। এটিই দেশের প্রথম ছাত্র রাজনীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ছাত্ররাজনীতির দলীয় কোন্দলের শিকার হয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১৫১ জন শিক্ষার্থী খুন হয়েছেন। দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ রাখতে হয়েছে। অপরদিকে খুবি প্রতিষ্ঠার ৩২ বছরেও ঘটেনি এমন কোন সংঘর্ষ।
অন্যান্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ভয়ে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে উঠতে চায় না। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ফলাফল, আর্থিক অবস্থা এবং প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে আসন প্রদান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী এ, জেড, এম আনোয়ারুজ্জামান জানান, “১৯৯১ সালে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পর অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে আমাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত। আমাদেরকে তাদের দলে টানার সবরকম কৌশল অবলম্বন করত। এরপর তৎকালীন উপাচার্যের কাছে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছিল। রাজনীতির নামে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড তারা দেখতে চায় না। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এ দাবি মেনে নেওয়ায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রথম রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন হিসেবে যাত্রা শুরু করে।”
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুবিতে ছাত্র রাজনীতি নেই তবে এখানকার ছাত্ররা রাজনীতি নিয়ে সচেতন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বিগত দিনে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার, বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডসহ অনেক ঘটনায় মানববন্ধনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কোনো ছাত্র রাজনীতির ব্যানারে নয় বরং সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্ররাজনীতি নেই তাই বলে নেতৃত্বের দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই শিক্ষার্থীরা। এখানে রয়েছে ২৫টির অধিক সংগঠন। যারা নির্বিঘ্নে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
সংগঠনের ব্যাপারে খুলনা ইউনিভার্সিটি ক্যারিয়ার ক্লাবে’র সভাপতি রাকিবুর রহমান তামিম বলেন, “খুবিতে সংগঠনগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা সহায়ক পরিবেশ বিরাজ করে। এসব সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দান সহ আরও নানা মানবীয় গুণাবলি অর্জন করে চলেছে।”