গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা
আসন পূরণে বিষয় ভিত্তিক পছন্দক্রমে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা
সিয়ান আল সিফাত ও অনিরুদ্ধ বিশ্বাস | প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২২
গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এমন সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি প্রক্রিয়া ছিল অন্যান্য সময়ের চেয়ে দীর্ঘ, ছাত্র সংকটে ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়কে বাধ্য হয়ে আসন ফাঁকা রেখে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যলয়েও (খুবি) আসন পূরণ করতে অন্যান্য বারের থেকে দ্বিগুন পরিমাণ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে আহবান করতে হয়েছে। পরীক্ষার আগেই বিষয়ভিত্তিক পছন্দক্রম নিয়ে নেওয়াকে এ সমস্যার সমাধান হিসেবে ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটে মোট আসন ছিল ৯৬টি; বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন ডিসিপ্লিনে ৫৫টি এবং হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিনে ৪০টি। গুচ্ছ পরীক্ষার পর আসন পূরণ করতে এবারে মেধা তালিকা দেয়া হয়েছে ১ বার, অপেক্ষমান তালিকা দেয়া হয়েছে ২ বার এবং এরপর ৪ ধাপে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে আসতে বলা হয়েছে।
অথচ, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আগে ১ বার মেধাতালিকা, ১ বার অপেক্ষমান তালিকা এবং সর্বোচ্চ মুঠোফোনে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীদের আসতে বললেই নির্ধারিত আসন পূরণ হয়ে যেতো।
‘খ’ ইউনিটেও একই চিত্র দেখা গেছে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আগে মোট আসনের বিপরীতে দুই গুণ শিক্ষার্থীকে আহ্বান করলেই আসন পূরণ হয়ে যেতো। সেখানে এবার মোট আসনের বিপরীতে ১০ গুণ পরিমাণ শিক্ষার্থী আহবান করতে হয়েছে।
শিক্ষকবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভর্তি প্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে শিক্ষক সমাজও অসন্তুষ্ট। মাঠ পর্যায়ে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই গুচ্ছ পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উদ্ভুত বিভিন্ন সমস্যার পেছনে এই যাচাই বাছাইয়ের অভাবকেই দায়ী করেছেন তারা।
তারা মনে করেন, আগামী দিনে ভর্তি প্রক্রিয়া সংশোধন না করে আবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সময় কমে আসবে। ফলে, শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শরীফ হাসান লিমন বলেন, “গুচ্ছ পরীক্ষা আয়োজনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানো। এদিকে, গুচ্ছ পরীক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে; মাঠপর্যায়ে যারা পরীক্ষার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করবেন তারা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ ছিলেন না। ফলে, এখানে একটা বড় ধরনের ফাঁক থেকে গিয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “ভর্তি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে আবেদনের সময়েই বাছাইকরণ প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। অর্থাৎ বিষয় বা বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে আগেই তার পছন্দক্রম জানাতে হবে। এক্ষেত্রে পছন্দক্রমের প্রক্রিয়াটি বিষয় ভিত্তিক হলে ভালো কেননা বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক পছন্দক্রম প্রক্রিয়ায় গেলে একটু নিচের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবারও শিক্ষার্থী সংকটে পড়ার আশঙ্কায় থাকবে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা স্কুলের ডিন অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক বলেন, “ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সামনে এখন অনেক সুযোগ। আগে ৬-৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেতো, এখন ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাচ্ছে। এ কারণেই বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী আহবান করতে হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগপৎ অংশগ্রহণের বিষয়টি এবারের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় দেখা যায়নি। আগামীতেও এরকম সমস্যা দেখা দিলে অপেক্ষামান তালিকায় বেশি শিক্ষার্থী আহবান করে আসন পূরণ করতে হবে। এছাড়া, পরীক্ষার আগেই শিক্ষার্থীদের থেকে বিষয় ভিত্তিক পছন্দক্রম নিয়ে নেওয়া যেতে পারে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও জীব বিজ্ঞান স্কুলের ডিন অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, “গুচ্ছ পরীক্ষায় ভর্তি প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। বারবার অপেক্ষমান তালিকা প্রকাশ করে শিক্ষার্থী আহবান করতে হয়েছে। তবে আগামীতে গুচ্ছ পরীক্ষা আয়োজনের আগে যেসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে সেখানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনার মাধ্যমে এর একটি সুষ্ঠু সমাধান বের হয়ে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মনে করছেন, বিষয় ভিত্তিক পছন্দক্রম পরীক্ষার আগে নিয়ে নিলেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।