সাক্ষাৎকার
জনসংযোগ পেশায় বহুমুখী জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়
অনিরুদ্ধ বিশ্বাস | প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২২
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আতিয়ার রহমান। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগটিতে কাজ করে আসছেন তিনি। অদম্য বাংলার সাথে একটি সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকতা থেকে জনসংযোগ পেশায় আসার গল্প, জনসংযোগ পেশার চ্যালেঞ্জ, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সময়ে জনসংযোগ এবং কেন শিক্ষার্থীদের জনসংযোগ পেশায় যাওয়া উচিত এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অদম্য বাংলার প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ বিশ্বাস।

অদম্য বাংলা: কেমন আছেন?
এস এম আতিয়ার রহমান: ধন্যবাদ আপনাকে। সৃষ্টিকর্তা ভালো রেখেছেন, ভালোই আছি।
অদম্য বাংলা: সাংবাদিকতা থেকে জনসংযোগ পেশায় এসেছেন। দীর্ঘ এই পথের গল্পটা জানতে চাই।
এস এম আতিয়ার রহমান: ’৮৫-তে আমি স্থানীয় দৈনিক পূর্বাঞ্চলে যোগদান করেছিলাম। তখন আমি মূলত শিক্ষা বিটে কাজ করতাম। ’৮৫ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হলে আমাকে পূর্বাঞ্চল থেকে এই আন্দোলনের ধারাবাহিক কাভারেজ দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম উপাচার্য হয়ে প্রফেসর ড. গোলাম রহমান স্যারের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে আমি তখন থেকেই অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রেস রিলিজগুলো তৈরী করে দিতাম। এরপরে ’৯৬-তে আমি চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দিয়ে সেকশন অফিসার হিসেবে এখানে আসি, জনসংযোগে কাজ শুরু করি।
অদম্য বাংলা: জনসংযোগ পেশার চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
এস এম আতিয়ার রহমান: জনসংযোগ পেশার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি হলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা। বিশেষ করে ব্যবস্থাপনের বিষয়টি আপনি বই পড়ে কোনো ছাঁচে ফেলে করতে পারবেন না। দুর্যোগ কোনো বাঁধাধরা ছাঁচ মেনে আসে না। অভিজ্ঞতা আর দ্রুততম সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতার মিশেলে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্যোগগুলো জনসংযোগ বিভাগকে সামাল দিতে হয়। এ কারণে দুর্যোগের সময়ে সবকিছু সামলে নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবমূর্তি রক্ষা করাটাই এই পেশার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো সেন্সরশিপ। কর্তৃপক্ষ অনেক সময় অনেক কিছু তার বক্তব্যে বলবে। কিন্তু কোনো কথায় বিতর্ক তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না জনসংযোগ কর্মকর্তার এই বোধটুকু থাকতে হবে।
অদম্য বাংলা: বলা হয়ে থাকে, জনসংযোগ পেশাটিতে নৈতিকতা বলে কিছু নেই। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
এস এম আতিয়ার রহমান: যদি কেউ একটি ন্যায্য দাবি উত্থাপন করে এবং তা যদি প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তের সাথে সাংঘর্ষিক হয় তবে জনসংযোগের কর্তৃপক্ষের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। জনসংযোগ কর্মকর্তাকে বরং পুরোটা সময় জুড়ে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি যেন অক্ষুণ্ণ থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। এখানে যেটা করা যেতে পারে সেটি হলো- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একটি অংশ হিসেবে জনসংযোগ বিভাগ সমস্যাটি সমাধানের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত এবং মসৃণ করা।
অদম্য বাংলা: জনসংযোগ বিভাগকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন আলোচিত বিষয়ে তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নিতে হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ সেদিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন?
এস এম আতিয়ার রহমান: এক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে- স্বীকার করতে হবে। সব বিষয়ে দেখভাল করার জন্য যেই জনবল দরকার এই মূহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের তা নেই। এছাড়া, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অথবা তাদের জ্ঞাত না করে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এ কারণেও কিছুটা দেরি হয়। এইদিক থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনসংযোগ বিভাগ কিছুটা স্বাধীন থাকে।
অদম্য বাংলা: পেশা হিসেবে জনসংযোগে কেন যাওয়া উচিত?
এস এম আতিয়ার রহমান: জনসংযোগ এমন একটি পেশা যেখানে থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের বাকি সব বিভাগের কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়, যা পেশাগত জীবনকে অভিজ্ঞতায় বড় করে তোলে। সরাসরি প্রতিষ্ঠান নির্বাহীর সংস্পর্শে থেকে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায় যা অন্য পেশায় খুব কম মেলে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হয়ে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ, বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়াকালীন উপস্থিত থাকা, প্রতিষ্ঠান নির্বাহী কোনো বক্তব্যের আগে পরামর্শ প্রদান প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ন কাজ করার সুযোগ থাকে। এক পেশাতেই বহু পেশার অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে জনসংযোগে আসা উচিত।
অদম্য বাংলা: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে আগামী দিনে যারা জনসংযোগ পেশায় আসতে চান তাদেরকে কি কি দক্ষতা অর্জনের পরামর্শ দেবেন?
এস এম আতিয়ার রহমান: আগামী দিনে যারা এই পেশায় আসতে চান তাদের প্রযুক্তির ব্যবহার জানতে হবে। সফটওয়্যারের কাজ জানলে এখন অনেক কিছুই সহজ হয়ে যায়। পাশাপাশি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা চাই। এছাড়াও, যারা ভালো আইডিয়া বা ভালো কনটেন্ট দিতে পারবেন তারা অগ্রাধিকার পাবেন।
অদম্য বাংলা: আগামী বছরে অবসরে যাচ্ছেন। অবসর পরবর্তী পরিকল্পনা কী?
এস এম আতিয়ার রহমান: আমি ব্যক্তিগত জীবনে পড়তে এবং লিখতে খুব ভালোবাসি। অবসরের পর লেখালেখির সাথেই থাকতে চাই। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি দেখতে চাই।
অদম্য বাংলা: সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এস এম আতিয়ার রহমান: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।