Sunday, December 22, 2024
Sunday, December 22, 2024

উন্নয়ন ও রাষ্ট্র

ভিত শক্ত হলেই তবে দীর্ঘস্থায়ীত্ব পাবে ইমারত

জি. এম. জাহাঙ্গীর আলম | প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২১

লেখক: জি. এম. জাহাঙ্গীর আলম

(১)
স্বাধীনতাত্তোর পাঁচ দশকে বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেকদূর। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বর্তমানে নিঃসন্দেহে সেরা সময় অতিক্রম করছি আমরা। প্রথমবারের তুলনায় বর্তমানে বাজেট দানবীয় আকার ধারন করেছে, জিডিপি ছুঁই ছুঁই করছে আট এর ঘর। আমাদের দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগও আশাতীত ভাবে বেড়ে চলেছে। নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হচ্ছে। আমরা জয় করেছি মহাকাশকেও।

শুধু তাই নয়, চিকিৎসার ন্যূনতম মান অর্জন, শিক্ষাকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া, মানুষের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার ব্যপারেও আমাদের সফলতা কম নয়।

উন্নত রাষ্ট্র ও আদর্শ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্য উপরের নিয়ামকগুলো যেমন অস্বীকার করার উপায় নেই তেমনি এগুলো যথেষ্টও নয়।

অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকে দেশের মূল ভিত্তি ভেবে আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাওয়ার উপায় নেই। এগুলো একটি রাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ীত্বের জন্য পর্যাপ্ত নিয়ামকও নয়।

একটি বহুতল ভবন দীর্ঘদিন টিকে থাকে শক্ত ভিতের উপর। তেমনি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলো, বহুতল ভবনের উপরি কাঠামোমাত্র। এই কাঠামোকে স্থায়ী ভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য আসল নিয়ামকগুলো প্রয়োজন যা সচারচর দৃষ্টির অগোচরে রয়ে যাচ্ছে।

(২)
একটি গণতান্ত্রিক দেশের মূল সৌন্দর্যই হলো ভিন্নমত। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ থেকে ব্যক্তি পর্যায় পর্যন্ত ভিন্ন মাত্রার চর্চা খুব দরকারি। সঠিক গণতন্ত্রের অনুশীলনই ভিন্নমত নিশ্চিত করতে পারে। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার শুধু ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত হলেই গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হয়ে যায় না।

গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতের দাবীতেই স্বাধীন হয়েছিল এদেশ। স্বাধীনতাত্তোরকালে আমরা কতটুকু গণতান্ত্রিক চর্চা করতে পেরেছি বা এখন করতে পারছি তা এখনো প্রশ্নবোধক চিহ্নের বেড়াজালে আবদ্ধ। সুতরাং এদিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করণে মুক্ত গণমাধ্যম অন্যতম নিয়ামক। বাংলাদেশের গণমাধ্যম কতটুকু স্বাধীন তা নিয়ে যথেষ্ট তর্ক বিতর্ক আছে। যদি মনে করা হয়, ক্ষমতাসীনদের দ্বারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে তবে তার দায় সংবাদকর্মীরাও এড়াতে পারেন না। কারণ সত্য ঘটনা তুলে ধরার জন্য কোন মিডিয়ার উপর সরকার চরম আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়েছে এমন উদাহরণ কম। দুই-একটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করে মিডিয়া কর্মীরা কেমন যেন কচ্ছপের মত খোলসের আড়ালে মুখ লুকিয়ে ফেলেছে। সুতরাং সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার জন্য সংবাদ কর্মীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে এসে সত্য প্রকাশে সাহসী হওয়ার বিকল্প নেই।

দেশের তরুন সমাজের আদর্শগত ভিত্তি ভেঙে পড়ায় ভবিষ্যৎ নেতৃত্বদানকারীরা ভুগছে আদর্শিক দ্বন্দ্বে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাথাচাড়া দিয়েছে দুর্নীতি। দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করার মত আত্মিক ও মানসিক শক্তি হারাতে বসেছে যুব সমাজ। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ, ফল নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা তরুণদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য যথেষ্ট।

নারী অধিকার নিশ্চিতে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে অনেক কাজ হলেও মাঠ পর্যায়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। বর্তমান সময়ে নারী নির্যাতনের মাত্রা ভয়ঙ্কর রূপ ধারন করেছে। অথচ নারীদের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ততা ছাড়া রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সফলতা অধরাই থেকে যাবে।

চরম সংকট মুহূর্তেও আমরা জাতীয় ঐকমতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছি। রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কাঁদা ছোড়াছুড়ি করেছেন। যা সত্যিই দুঃখজনক। এমন পরিস্থিতি দেশের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে দুর্বল করে ফেলে।

উপরিউক্ত নিয়ামকগুলোর সাথে নীতিনৈতিকতা, মূল্যবোধ, মানবিকতাবোধগুলো একটি রাষ্ট্রের মূলভিত্তি।

করোনা সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশকেও ছুড়ে দিয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। আমাদের নীতি নির্ধারকরা আত্মবিশ্বাসের সাথেই মোকাবেলা করছে সেই চ্যালেঞ্জগুলোকে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঘোষিত হয়েছে জিরো টলারেন্স। নারীর ক্ষমতায়নে করা হচ্ছে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ। এই ইতিবাচক দিকগুলোই আমাদের আশা জাগায়। স্বপ্ন দেখায় বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার। সেজন্য আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে।

বহুতল ভবনের ভিত শক্ত না হলে যেমন ভবনটি খুব সহজে ধসে পড়ে ঠিক তেমনি রাষ্ট্রের মূলভিত্তি গুলোর সঠিক পরিচর্যা ছাড়া উন্নয়নের স্থায়িত্বও অসম্ভব। মুখ্য নিয়ামক গুলোর অভাবই রাষ্ট্রের উন্নয়নকে ধসিয়ে দিতে যথেষ্ট।

লেখক: জি. এম. জাহাঙ্গীর আলম, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

1 COMMENT

  1. দেশের সামগ্রিক অবকাঠামোর গঠনমূলক বিশ্লেষণ হয়েছে।।। বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক পরিমন্ডলে আমাদের অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত উন্নতির কথা যেমন সুন্দরভাবে উঠে এসেছে, তেমনি দেশের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কথাও উঠে এসেছে।
    নীতিনির্ধাকরা ভিত্তি মজবুত করার দিকে আরো মনোযোগী হবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।

Comments are closed.

আরও পড়ুন