Monday, December 23, 2024
Monday, December 23, 2024

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মী

১০৬ একরের অতন্দ্র প্রহরী তারা

মো. সোয়েব ছাকি | প্রকাশ: ১৮ মে ২০২২

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় খান জাহান আলী হলে নৈশ পাহারায় আছেন নিরাপত্তা কর্মী গোলাম রাসূল। ছবি: মো. সোয়েব ছাকি।

খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গল্লামারী মোড় থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই সড়কের সঙ্গে লাগোয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। ফটক দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়বে ২ জন নিরাপত্তা কর্মী দাঁড়িয়ে স্বাগত জানাচ্ছেন।

মূল ফটক দিয়ে ঢুকে পিচঢালা পথ ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া। ক্যাফেটেরিয়া ছেড়ে আরও কিছুটা এগিয়ে গেলেই পশ্চিম ও পূর্ব দিকে চলে গেছে দুটি সড়ক এবং এই সড়ক দুটির মিলন স্থানের নাম হাদি চত্বর যেখানে দেখা মিলবে আরো ২ জন নিরাপত্তা কর্মীর, যারা আপনাকে হাসিমুখে অভিবাদন জানাবে। যেকোনো সাহায্যের জন্য প্রস্তুত তারা।

পশ্চিম দিকের সড়কে রয়েছে দ্বিতীয় একাডেমিক ভবন ও মেয়েদের দুটি হল। আর পূর্ব দিকে রয়েছে প্রথম ও তৃতীয় একাডেমিক ভবন, খেলার মাঠ আর ছেলেদের তিনটি হল। প্রতিটি হলে ও একাডেমিক ভবন গুলোয় দেখা মিলবে নিরাপত্তা কর্মীদের। তারা সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখছে হল বা একাডেমিক ভবন গুলোয় প্রবেশকারীদের উপর।

সড়কের ঠিক সামনেই উত্তর দিকে রয়েছে ‘অদম্য বাংলা’ ভাস্কর্য। অদম্য বাংলার উত্তর-পশ্চিম কোণে কয়েকটি দোকান। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে এই নিরাপত্তা কর্মীদের পদচারণার দেখা মিলবে। যাদেরকে অনেক শিক্ষার্থী ভালোবেসে ‘মামা’ বলে সম্মোধন করে থাকে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের তথ্য মতে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিরাপত্তা প্রহরীদের সংখ্যা ১০৭ জন। যারা হল বিভাগ ও প্রশাসনিক বিভাগ, এই দুই শাখায় বিভক্ত।

এর মধ্যে হল বিভাগে নিরাপত্তা কর্মীদের সংখ্যা ৩৮ জন। পাঁচটি হলের প্রতিটি হলে দায়িত্ত্বরত রয়েছেন ২ জন নিরাওত্তা কর্মী। দিনে ৩টি শিফটে তাদের পরিবর্তন হয় এবং আট ঘন্টা করে সকলের দায়িত্ত্ব থাকে। প্রতিদিন ২ জন সেকশন অফিসার তাদের তত্ত্বাবধানের জন্য নিয়োজিত থাকেন।

অপর দিকে প্রশাসনিক বিভাগে মোট নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা ৬৯ জন। যারা ক্যাম্পাসের প্রধান-ফটক, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, গেস্ট হাউজ, রোটারি হাসপাতাল, ফিল্ড ল্যাব, কোয়ার্টার, উপাচার্যের বাসভবন, একাডেমিক ভবনগুলো সহ মোট ২৩টি স্থানে নিরাপত্তা ও সহায়তার জন্য দায়িত্ব পালন করছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অতন্দ্র প্রহরী যারা কিনা তাদের ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছে এই পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বা দুর্ঘটনা না ঘটে সেদিকে সারাক্ষণ নজর রেখে চলছে এই মানুষগুলো। যাদের আবেগ অনুভুতি জড়িয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিষয়ের সাথে। তারা ভালোবাসা আর যত্নে আগলে রেখেছে এই ক্যাম্পাসটিকে।

এই মহামারীর সময়ও পুরো ক্যাম্পাসের দেখাশোনা করেছেন এই নিরাপত্তারক্ষীরা। শিফট অনুযায়ী তাদের রুটিন টাইম পরিবর্তন হলেও দিনের ২৪ ঘন্টাই দেখা মিলে এই মানুষগুলোর।

চার বছর ধরে কর্মরত নিরাপত্তা কর্মী আসিফের কাছে তার পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়টাকে আমাদের নিজের বাড়ির মতই দেখি।’

তিনি আরো বলেন, ‘একবার আমার এলাকার সরকারি একজন বড় কর্মকর্তার সাথে হঠাৎ দেখা। তিনি গাড়ি থামিয়ে আমাকে সালাম দিয়ে বললেন, মামা কেমন আছেন? আমি তখন ভয় পেয়ে গেলাম। চিন্তা করলাম কিনা কি ঘটতে যাচ্ছে আমার সাথে। ঠিক তখনই তিনি বললেন, মামা আমি যখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম আপনি আমাদের তৃতীয় একাডেমিক ভবনের সামনে দায়িত্ব পালন করতেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে তিনি আমাকে গাড়িতে করে তার অফিসে নিয়ে গিয়ে কি আপ্যায়নটাই-না করলেন। জীবনে অন্য কোনো পেশায় থকলে বোধহয় মামা এতো সম্মান পেতামনা। আমি ভালোভাসা থেকে এই পেশার সাথে জড়িয়ে পড়েছি।’

দিনশেষে অভাব থাকলেও মানসিক শান্তি আর আত্মতৃপ্তি নিয়ে বেঁচে আছেন তারা এমনটাই জানিয়েছেন পাশে থাকা অপর এক নিরাপত্তা কর্মী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাফি বলেন, ‘এই লোকগুলোর জীবনযাপন খুবই সাধারণ। কিন্তু তাদের সততা আর মহানুভভতা অস্বীকার করতে পারবেনা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। সকল সুবিধা-অসুবিধায় এই মানুষগুলোকে আমরা যেভাবে পাশে পাই তাতে তারা আমাদের একান্তই আপন হয়ে গেছেন।’

আরও পড়ুন