Saturday, April 19, 2025
Saturday, April 19, 2025

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবার মান বাড়ানোর তাগিদ শিক্ষার্থীদের

এ, বি, এম, রায়হানুল ফেরদৌস | প্রকাশ: ৮ এপ্রিল ২০২২

ছ‌বি: খুলনা বিশ্ব‌বিদ্যালয় ও রোটা‌রি ক্লাবের সম‌ন্বিত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চি‌কিৎসা কার্যক্রম।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) স্বাস্থ্য‌কে‌ন্দ্রে চিকিৎসা সেবা চালুর দীর্ঘসময় পরেও পর্যাপ্ত সংখ্যক বি‌শেষজ্ঞ চি‌কিৎসক নেই। এতে অস‌ন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি কেন্দ্র‌টি থেকে প্রয়োজনীয় যে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকেন সেটাও অপ্রতুল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠার তিন দশকেও অপর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ, স্বাস্থ্য কার্ড ব্যবস্থা চালু না থাকাসহ নানা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের রয়েছে অভিযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্বাস্থ্য‌কে‌ন্দ্রের কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে রোটা‌রি ক্লাব খুলনার হাসপাতালে চলমান রয়েছে। সেখানে নেই প্রয়োজনীয় শয্যা ব্যবস্থা। 

কেন্দ্র‌টিতে তিন শিফটে সর্বমোট আট জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। তাদের সবাই এমবিবিএস ডিগ্রিধারি। এছাড়া একজন করে দন্ত ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী ও প্রায় ১ হাজার শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি রয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক বি‌শেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় এই ধরণের সেবাও সবসময় মেলে না। 

বুধবার (৩০ মার্চ) স‌রেজ‌মিনে দেখা যায়, কেন্দ্র‌টি‌তে সকা‌লের শিফটে তিন জন চিকিৎসক সেবা দি‌য়ে চ‌লেছেন। ঠান্ডা জনিত জ্বর, কাশি, পেট ব্যথা প্রভৃতি সমস্যায় যেসকল শিক্ষার্থীরা সেবা নিতে এসেছেন তাদের চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে মিলছে না ব্যবস্থাপত্রের উল্লেখিত সকল ঔষধ। 

স্বাস্থ্য‌কে‌ন্দ্রে সেবা নি‌তে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শামীমা সাজনীন কুইন জানান, এখানকার চিকিৎসা সেবার মান গড়পড়তা। ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশনে যে ঔষুধ লেখেন তার অর্ধেক বাইরে থেকে কিনতে হয়। যে কোন সমস্যায় নাপাসহ কয়েকটি ওষুধ ঘুরে-ফিরে দেয়া হয়।’ 

এ বিষ‌য়ে জানতে চাই‌লে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. কানিজ ফাহমিদা বলেন, বি‌ভিন্ন রো‌গের জন্য সর্ব‌মোট ৮০ প্রকা‌র ঔষধ মে‌ডিকেল থে‌কে সরবরাহ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে গঠিত বোর্ড এ সকল ঔষধ নির্ধারণ করে থা‌কে।

স্বাস্থ্য‌কে‌ন্দ্র সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১০০ জন সেবাগ্রহিতা এখান থেকে চি‌কিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। গর‌মের সম‌য়ে যা বে‌ড়ে দাঁড়ায় ১৫০ জনে। প্রাথমিক চি‌কিৎসার পাশাপা‌শি বর্তমা‌নে কেন্দ্র‌টি‌তে প্যাথলজি বিভাগের অধীনে রক্ত ও প্রসাব পরীক্ষা, দন্ত পরীক্ষা, এক্সরে ও ইসিজি সেবা চালু রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে রো‌গি প‌রিবহ‌নের জন্য রয়েছে সার্বক্ষ‌ণিক প্রস্তুত থা‌কে তিনটি এম্বুলেন্স। 

বি‌ভিন্ন ডি‌সি‌প্লি‌নের অন্তত ১০ জ‌ন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়ে এই প্রতিবেদকের। তাদের মতে স্বাস্থ্য‌কে‌ন্দ্রে সেবার মান বাড়া‌তে পর্যাপ্ত সংখ্যক বি‌শেষজ্ঞ চি‌কিৎসকের ‌বিকল্প নেই। স্নায়ু, মে‌ডি‌সিন, গাই‌নির মতো বিভিন্ন বিষ‌য়ে বি‌শেষজ্ঞদের এখানে প্রয়োজন রয়েছে। এসব সেবা সপ্তা‌হজু‌ড়ে বি‌শেষ কোন দি‌নের নি‌র্দিষ্ট সম‌য়ে পাওয়া গে‌লে শিক্ষার্থীসহ বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচা‌রিরা বি‌শেষভা‌বে উপকৃত হবেন। 

এই প্রস‌ঙ্গে ডা. কানিজ ফাহ‌মিদা বলেন, “বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তা আমরাও অনুভব করি। এ বিষয়ে স্যারের (উপাচার্য) সাথে কথা হয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যহত আছে।’’ 

বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ে স্বাস্থ্যকার্ড ব্যবস্থার বিষ‌য়ে গণিত বিভাগের ‌শিক্ষার্থী ফিরোজ বিশ্বাস বলেন, বাংলাদেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য কার্ড সেবা চালু রয়েছে। এখানে সেটি না থাকায় ব্যবস্থাপত্র একবার হারিয়ে ফেললে ট্রিটমেন্টের কোন রেকর্ড থাকে না।

স্বাস্থ্য‌কে‌ন্দ্রের সা‌র্বিক বিষ‌য়ে জান‌তে চাই‌লে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কতগুলি সমস্যার কথা আমরাও জেনেছি। আশা করছি নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু হলে সেগুলোর সমাধান হয়ে যাবে। আর নতুন করে যেহেতু স্বাস্থ্যকার্ড চালুর কথা উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখ‌বে।’’ 

তিনি আরো বলেন, এছাড়া ভবিষ্যতে আরও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যাতে নিয়ে আসা যায় সে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাবনায় রয়েছে।’’ 

নির্মাণাধীন নতুন ভবন 

ছ‌বি: নির্মানাধীন শহীদ বুদ্ধিজীবি ডা. আলীম চৌধুরি চিকিৎসালয়।

খুবির কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলমান র‌য়ে‌ছে। চারতলা ভিত্তি বিশিষ্ট এ প্রক‌ল্পের কাজ প্রথম ধা‌পে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত সম্পন্ন হ‌বে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির সা‌বেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান ২০১৯ সা‌লের ডিসেম্বর মাসে ১০ শয্যা বিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য‌কে‌ন্দ্রের নির্মান কাজের উদ্বোধন করেন। বাগেরহাটের এফটিজেডটি এন্ড টিএমসি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এটি বাস্তবায়নে কাজ করছে। 

ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রথম ধা‌পের প্রায় অ‌র্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রক‌ল্পের এই অং‌শের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। করোনা মহামারীর কারণে গতবছর নির্মাণকাজ প্রায় আট মাস বন্ধ ছিল। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের প্রথমাংশে বা‌কি কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে জা‌নি‌য়ে‌ছেন প্রকল্প সং‌শ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন