Friday, May 3, 2024
Friday, May 3, 2024

সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ্যম: মতামত প্রকা‌শে আপ‌নি কতটা মি‌ডিয়া দ্বারা নিয়‌ন্ত্রিত?

এ, বি, এম, রায়হানুল ফের‌দৌস | প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২১

Share on facebook
Share on email
Share on print
Share on twitter
Share on whatsapp
এ, বি, এম, রায়হানুল ফের‌দৌস

সম্প্র‌তি দে‌শের এক‌টি স্বনামধন্য উচ্চ‌শিক্ষা প্র‌তিষ্ঠা‌নের চারজন ছা‌ত্রের দ্বারা সংঘটিত এক‌টি যৌন হয়রা‌নির ঘটনা সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ্যমে রী‌তিমত ভাইরাল। অসংখ্য ব্যবহারকা‌রি নি‌জে‌দের পো‌স্টে ঘটনা‌টি সম্প‌র্কে তা‌দের ভাবনা শেয়ার ক‌রে‌ছেন। এমন কোনো না কোনো ঘটনা প্র‌তি‌দিন সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ্যমসমূ‌হে আলোচনার কে‌ন্দ্রে থাক‌ছে। কিন্তু উদ্বে‌গের বিষয় অধিকাংশ ব্যবহারকা‌রি এসব ঘটনায় মূল আলোচনাকে পাশ কা‌টি‌য়ে নি‌র্দিষ্ট জন‌প্রিয় স্রো‌তে গা ভাসা‌চ্ছেন।

উক্ত ঘটনা‌টি সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ্যমসমূ‌হে যেভা‌বে এসে‌ছে তার ভাল-মন্দ উভয় দিক র‌য়ে‌ছে। যে মে‌য়ে‌টি অনলাইনে এমন হেনস্তার স্বীকার হ‌য়ে‌ছে তার ছ‌বি, প‌রিচয় কোনভা‌বেই সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ্যমগু‌লো‌তে আসে‌নি। মে‌য়ে‌টির প‌রিচয় গোপন রে‌খে বিষয়‌টি যেভা‌বে উত্থা‌পিত হ‌য়ে‌ছে সেটা নিঃস‌ন্দে‌হে প্রশংসার দা‌বিদার। এতে ক‌রে সে দ্বিতীয়বার হেনস্তার হাত থে‌কে রক্ষা পে‌য়ে‌ছে।

কিন্তু সমস্যার বিষয়, এই ঘটনা‌টি কর্তৃপক্ষ ঠিক যে কার‌ণে সবার সাম‌নে আনতে চে‌য়ে‌ছে সে উদ্দেশ্য সফল হয় নি। ‌যে চারজন এমন জঘন্য কাজ‌টি ক‌রে‌ছে সেই কৃৎকর্ম‌কে পাশ কা‌টি‌য়ে তাদের শিক্ষা প্র‌তিষ্ঠান আলোচনার কে‌ন্দ্রে চ‌লে এসে‌ছে। প্র‌তিষ্ঠানকে কাঠগড়ায় দাঁড় ক‌রি‌য়ে পু‌রো বিষয়‌টি‌ হাস্যরসাত্মকভা‌বে উপস্থাপ‌নের পায়তারা চ‌লে‌ছে। কথোপোকথ‌নের এক‌টি স্ক্রিননশর্ট‌কে (মোবাইল স্কি‌নের হুবহু ছ‌বি) কেন্দ্র ক‌রে সামা‌জিক মাধ্যমসমূ‌হে ব্যবহারকা‌রিরা নি‌জে‌দের জা‌হির কর‌তে শুরু ক‌রে। ফ‌লে মূল ঘটনা ও অপরাধীদের থে‌কে দৃ‌ষ্টি স‌রে ভিন্ন এক‌টি স্রোত জন‌প্রিয়তা পায়। অধিকাংশ ভাইরাল ইস্যু এভা‌বে পাশ কা‌টি‌য়ে ভিন্ন স্রো‌তে বইতে শুরু ক‌রে। কিন্তু এই স্রোতের শুরুটা হয় কিভা‌বে?

সোশ্যাল মিডিয়ায় এক‌টি ইস্যু শেয়া‌রের সবচে‌য়ে বড় সমস্যা আপ‌নি সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। কিন্তু আশ্চ‌র্যের বিষয় ব্যবহারকা‌রি না পার‌লেও মি‌ডিয়া তার ব্যবহা‌রকা‌রি‌দের নিয়ন্ত্রণ কর‌তে পা‌রে। এমন একা‌ধিক ঘটনার উদাহরণ টানা যায় যেখা‌নে মি‌ডিয়া জনমত নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে বিভিন্ন অন্যায্য ঘটনা ন্যায্যতা পেয়েছে, মূল ঘটনার মোড় ভিন্ন দি‌কে ঘু‌রে গে‌ছে। বিশ্বখ্যাত সমালোচক, এমআইটি’র এ্যামি‌রি‌টাস অধ্যাপক নোম চমস্কি তাঁর লেখা ‘Silent Weapons for Quiet War’ বই‌য়ে দে‌খি‌য়ে‌ছেন কিভা‌বে মি‌ডিয়া আমা‌দের চিন্তা-ভাবনা‌র ওপর প্রভাব বিস্তার কর‌ছে।সেখা‌নে তি‌নি ‌মি‌ডিয়া যেসকল কৌশল অবলম্বন ক‌রে পুরো বিষয়‌টি সম্পাদন ক‌রে তা উল্লেখ ক‌রে‌ছেন। এর ম‌ধ্যে র‌য়ে‌ছে: মূল ঘটনা থে‌কে সাধার‌ণের মনোযোগ ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া, কৃত্রিম সমস্যা তৈরি করে যাদুকরি ভাবে সেগুলির সমাধান প্রস্তাব করা, অগ্রাহ্য বিষ‌য়কে ধীরে ধীরে গ্রহণ করানোর কৌশল প্রভৃ‌তি।

এখন ‌নি‌র্দিষ্ট ট্রে‌ন্ডকে (ধারা) জনসাধারণ তো সহ‌জে ধারণ ক‌রবে না। অগ্রাহ্য জিনিসকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সেটি বছ‌রের পর বছর ধ‌রে প্রয়ো‌গের প্র‌য়োজন। এক‌টি ধারা দীর্ঘ‌দিন আরো‌পের ফ‌লে সম্পূর্ণ নতুন আর্থ-সামা‌জিক ব্যবস্থা (নিওলিবা‌রে‌লিজম) দাঁ‌ড়ি‌য়ে যায়। বর্তমা‌নে ভাইরাল ইস্যু‌গু‌লো‌তে যে মানুষ যু‌ক্তির থে‌কে আবেগ‌কে বে‌শি গুরুত্ব দি‌চ্ছে, গঠনমূলক আলোচনা থে‌কে বে‌রি‌য়ে পপুলার ট্রে‌ন্ডকে অনুসরণ কর‌ছে, এমন অবস্থা এক দশক আগেও ছিল না। ধীরে ধীরে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে আমাদের চোখে লাগে নি। একই কার‌ণে মূল ঘটনা‌কে পাশ কা‌টি‌য়ে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বিষ‌য়ে আলোচনা দীর্ঘ হ‌চ্ছে।

সামাজিক মাধ্যমগু‌লি‌তে খেয়াল কর‌লে দেখা যায় একজন ব্যবহা‌রকা‌রি সমজাতীয় দু‌টি ঘটনা ভিন্ন সম‌য়ে দু’রকম দৃ‌ষ্টিভ‌ঙ্গি‌তে দেখ‌ছে। গত বছ‌রের শেষ‌দি‌কে বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের শিক্ষার্থী‌দের একাংশ কখনও চাচ্ছে, স্বশরী‌রে বিশ্ব‌বিদ্যালয় খু‌লে দিক। অনলাইন পাঠদান কার্যক্র‌মে তারা সন্তুষ্ট নয়। এতে ক‌রে পড়া‌লেখার স্বাভা‌বিক গ‌তি ব্যাহত হ‌চ্ছে। আবার ‌যখন অন্যান্য দে‌শে বিশ্ব‌বিদ্যালয় খু‌লে দেয়ার পর শিক্ষার্থী‌দের ক‌রোনা ভাইরা‌সে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকা‌শিত হ‌চ্ছে তখন তারা সংবাদ‌টি শেয়ার ক‌রে ক্যাপশনে (শি‌রোনাম) লিখ‌ছে, স্বশরী‌রে বিশ্ব‌বিদ্যালয় খু‌লে দেয়ার পর কোন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হ‌লে তার দায়ভার প্রশাসন‌কে নি‌তে হ‌বে। এতে নি‌জেরাই স্ব‌বি‌রোধী অবস্থা‌নে দাঁ‌ড়ি‌য়ে যা‌চ্ছে। মতামত দেয়ার আগে ঘটনা দু‌টি‌কে একই সমান্তরা‌লে আন‌তে সীমাবদ্ধতার ক্ষেত্রগু‌লোও মাথায় রাখ‌তে হ‌বে। সংবাদ মূল্য র‌য়ে‌ছে ব‌লে বিষয়দুটি মি‌ডিয়া‌তে এসে‌ছে সত্য। ত‌বে একজন স‌চেতন ব্যবহারকা‌রি হি‌সে‌বে আপনা‌কে নি‌জের অবস্থান সম্প‌র্কে প‌রিষ্কার থাকা দরকার। মি‌ডিয়ার দৃ‌ষ্টিভ‌ঙ্গি এবং আপনার দর্শ‌নের মিশ্র‌নে এক‌টি স্বতন্ত্র মত সৃ‌ষ্টি প্র‌য়োজন যা সাধার‌ণের জ্ঞানগত বিকাশে অত্যন্ত জরু‌রি। তাই আপনি আপনার ভাবনা‌কে কতটা মি‌ডিয়ার সরাস‌রি প্রভাব থে‌কে মুক্ত রাখ‌তে পার‌ছেন তা ভাবার সময় এসে‌ছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

Share on facebook
Share on email
Share on print
Share on twitter
Share on whatsapp

আরও পড়ুন