Friday, May 3, 2024
Friday, May 3, 2024

বিশেষ সাক্ষাৎকার: জয়শ্রী ভাদুড়ী

সাংবাদিকতায় নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে

সুমাইয়া খাতুন | প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২১

Share on facebook
Share on email
Share on print
Share on twitter
Share on whatsapp
জয়শ্রী ভাদুড়ী

সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই সামনে এগিয়ে যেতে হয় এ পেশায়। সময়ের সাথে পুরুষের পাশাপাশি এখন নারীও সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করছে। তারা সাহসিকতার সাথে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, তাদের অনেকেই সাহস নিয়ে এগিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত নানা বাঁধার সম্মুখীন হয়ে হাল ছেড়ে দিচ্ছে।

এসকল বিষয়ে অদম্য বাংলা’র সাথে কথা বলেছেন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক জয়শ্রী ভাদুড়ী। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াকালীন সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি রাবি রিপোটার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ছিলেন। স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার পর উক্ত পত্রিকাতে সাব-রিপোর্টার হিসেবে যুক্ত হোন, এবং বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য ও সেবা খাতে নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত আছেন।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুমাইয়া খাতুন, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

অদম্য বাংলা : বর্তমান সময়ে দেশে নারী সাংবাদিকতার প্রেক্ষাপট কেমন বলে মনে করেন?

জয়শ্রী ভাদুড়ী: নারীর সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ ৬০ এবং ৮০’র দশকে ছিলো হাতেগোনা। এখন মিডিয়ার যেমন বিকাশ হয়েছে পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন, গণমাধ্যমের বিভিন্ন শাখার সাথে সাথে নারী সাংবাদিকের সংখ্যাও বেড়েছে, যেটা চোখে পড়ার মতো। আনুপাতিক হারে নারী পুরুষ সমান বা খুব যে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে গেছে তা না, কিন্তু কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়েছে। নারীরা আগের তুলনায় এই পেশায় বেশি আসছে। নিজেরা আগ্রহী হচ্ছে এবং সাংবাদিকতার ব্যাপারে পারিবারিক যে একটা প্রতিবন্ধকতা ছিলো সেটা কিছুটা হলেও কমেছে। অদম্য বাংলা: নারীরা সাংবাদিকতায় আসতে চায় না কারণ তারা এই পেশাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে। আপনি কি এই কথার সাথে একমত? জয়শ্রী ভাদুড়ী : পেশা ঝুঁকিপূর্ণ এটা পুরোপুরি একমত তবে আসতে চায় না এই কথার সাথে একমত না। কারণ প্রতিবছর বা প্রতিমাসে নতুন নতুন নারী এই পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর সাংবাদিকতা বিভাগে নারীরা ভর্তি হচ্ছেন। ৫০ টা সীট থাকলে দেখা যাচ্ছে ১৫-২০ টা কখনও ২৫ টা মেয়েও পড়ছে। কারণ তাদের কিন্তু আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ আগ্রহ বাড়ছে।

অদম্য বাংলা: সাংবাদিকতা পেশায় নারীর অপ্রতুল অংশগ্রহণের পেছনে নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্রের অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?

জয়শ্রী ভাদুড়ী: হ্যা, নারীদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সেটা আমার মনে হয় অফিসের থেকে অফিসের বাইরের পরিস্থিতি বেশি ফেস করতে হয়। এখন নারীর অংশগ্রহণ কিছুটা বাড়ার কারণে কিছুটা হলেও এই সমস্যাগুলো কমেছে। অদম্য বাংলা: অফিসের বাইরে সমস্যা ফেস করতে হয় বলতে কি ধরনের সমস্যা? জয়শ্রী ভাদুড়ী : একজন পুরুষ যখন সাংবাদিকতা করে তখন তার যে ঝামেলাগুলো হয় একজন নারীর ঝামেলা তার থেকে বেশি। যেমন : নারীরা সাধারণত ক্রাইম বিটে কাজ করে না, হাতেগোনা খুব কম। কারণটা হচ্ছে, এই যে বড় ধরনের দুর্ঘটনা যখন ঘটে, অনেক ভিড়ভাট্টা, মারামারি, সংঘর্ষ হয় সেখানে অফিসগুলো নারীদের পাঠানো সেফ মনে করে না এবং নারীরা নিজেরাও তাই মনে করে। তারা পরিস্থিতি সামলাতে পারে না, যেমন: বড় কোনো ঘটনায় পুলিশ যখন বক্তব্য দেয় ভিড়ভাট্টা, ধাক্কাধাক্কি, যে পরিস্থিতিটা হয়, অনেক সময় লাঠি চার্জ হয় নারীদের পক্ষে এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া খুব কঠিন হয়ে যায়। অদম্য বাংলা: কর্মক্ষেত্রে নারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যমূলক আচরনের শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? জয়শ্রী ভাদুড়ী : শ্রমিকদের যেমন বেতনের ক্ষেত্রে বৈষম্য আছে নারী সাংবাদিকদের এমনটা নেই। বৈষম্য হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিট চয়েসে। যেমন: পলিটিক্যাল বিটে নারীদের অংশগ্রহণ কম, হয়তো শুধু পিএম বিট, পিএম এর বক্তব্য কভার করা। কিন্তু পলিটিক্যাল যে নিউজ সে জায়গাটাই কম, ক্রাইম বিটে কম। এইযে বিট চয়েসের ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয় নারীরা বোধহয় কালচারাল বিটে কাজ করার জন্য সাংবাদিকতায় এসেছে। এজন্য আমাদেরকে অনেক জায়গায় নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। কোনো অনুসন্ধানী নিউজ করতে যেয়ে যখন অনেক ঝুঁকি-ঝামেলা থাকে, তখন সেটা আমাদেরকে পুরুষদের থেকে ভালোভাবে কাভার করে প্রমাণ করতে হয় যে আমরাও সমান কাজ করতে পারি। অর্থাৎ দ্বিগুণ পরিশ্রম করে সমান হতে হয়। এটাই বড় বৈষম্যের জায়গা।

অদম্য বাংলা: বিভিন্ন গণমাধ্যমে নারী সাংবাদকর্মীরা যৌন নিপীড়নের শিকার হন এমন অভিযোগ উঠে এসেছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি হতে পারে?

জয়শ্রী ভাদুড়ী: এ থেকে পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া। সংবাদপত্রের কর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যে ধরনের আইনকানুন আছে সেগুলোকে একটু বাড়ানো, নতুনভাবে হিসাব-নিকাশ করা, যেহেতু এই ঘটনাটা প্রায়ই ঘটছে। একটা ভুল নিউজ দিলে প্রেস কাউন্সিলে বিচার হয় কিন্তু এই ধরনের নেক্কারজনক কাজের সুষ্ঠু বিচার হয় না। এজন্য উচিত আইণী ব্যবস্থা নেওয়া। আর সর্বোপরি যৌন হয়রানিমূলক মানসিকতাগুলো দূর করা জরুরি। 

অদম্য বাংলা: অনেক সময় দেখা যায়, যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েও অনেক নারী সংবাদকর্মী চাকরি হারানোর ভয়ে মুখ খুলছে না। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

জয়শ্রী ভাদুড়ী: প্রায়ই এই ঘটনাটা ঘটছে। চাকরি হারানোর ভয়ে অনেকে মুখ খুলছে না। আসলে যোগ্যতা থাকলে চাকরির অভাব হয়না এই বিষয়টা তাদের মনে রাখা উচিত। কেউ যদি যোগ্য হয় এবং যথেষ্ট পরিশ্রম করে তার চাকরি হবেই। তাই আমি মনে করি অন্যায় হলে প্রতিবাদ করতে হবে, কাজের সাথে কখনো একটা অপরাধের সামঞ্জস্য হতে পারেনা। 

অদম্য বাংলা: সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আপনি কি কি বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন? 

জয়শ্রী ভাদুড়ী: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আমি যখন বাংলাদেশ প্রতিদিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করি তখন আসলে অন্যান্য মিডিয়া হাউসগুলোতে তেমন কোনো নারী সাংবাদিক ছিলো না। যেকারণে সর্বপ্রথম আমাকে এটা প্রমাণ করতে হয়েছে সাংবাদিকতা নারীরাও করতে পারে। যতবড় ঘটনাই হোক মার্ডার বা গোলাগুলি আমি নিজে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করতাম। তো শুরুর দিকে প্রচুর এক্টিভিটি দেখাতে হয়ছে, পুরুষদের সেই তুলনায় অর্ধেকও করতে হয় না। অনেকসময় বাসায় আসতে রাত ১০ টা বেজে যেতো, নানান রকম আলোচনা-সমালোচনা আমাকে নিয়ে হতো, পরিবারের মানুষের থেকে আশেপাশের মানুষই আলোচনা বেশি করতো। নানারকম হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। ক্যাম্পাস প্রতিনিধি থাকাকালীন চাঁদা নিয়ে শিক্ষার্থীদের হলে তোলার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নিয়ে নিউজ করার পর নানারকম হুমকি-ধামকির সম্মুখীন হয়েছি। ঢাকায় আসার পর ওয়াসাতে ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতির একটা নিউজ করার পর প্রচুর পরিমাণে হুমকি-ধামকি দিচ্ছিলো ফোনে। তো সবমিলিয়ে সাংবাদিকতা জীবনে এমন নানাধরণের বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি। 

অদম্য বাংলা: বর্তমানে অনেক নারী সাংবাদিকতায় আসছে কিন্তু আসার পর অনেকেই হাল ছেড়ে দিচ্ছেন, এর কারণ কি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন? 

জয়শ্রী ভাদুড়ী: যে আশা নিয়ে আসছিলো সেটা হয়তো পূরণ হচ্ছে না। স্যালারিটা তাদের পোষাচ্ছে না। অনেকের হয়তো মোহ ভঙ্গ হচ্ছে কারণ প্রথমদিকে অনেকে নানান রকম ফ্যান্টাসি থেকে আসে। টিকে থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিশ্রমটা করেন না কেউ কেউ। আর একটা বড় বিষয় থাকে, সাংসারিক চাপ। একটা মেয়ে যখন বিয়ে করে তারপর সংসার হয়, বাচ্চা হয় তখন থেকে রিপোর্টিংয়ে সময় দেওয়াটা খুব কঠিন হয়ে যায়। অন্যদিকে নিউজ ডেস্কে কাজ করলেও দুপুর থেকে প্রায় ৮-৯ ঘন্টা ডিউটি করতে হয়। বাসায় ফিরতে অনেক সময় রাত হয়ে যায়। এসব নানাবিধ সমস্যার কারণে হয়তো হাল ছেড়ে দেয়। 

Share on facebook
Share on email
Share on print
Share on twitter
Share on whatsapp

আরও পড়ুন