Sunday, December 22, 2024
Sunday, December 22, 2024

মিনি আরএএস পদ্ধতিতে মাছ চাষে সফলতা

শামীনা শাজনীন কুইন | প্রকাশ: ২৩ মে ২০২২

মিনি আরএএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘরের ভিতরে ট্যাঙ্কের মধ্যে মাছ চাষ করছেন মোহাম্মদ রনি শেখ। ছবি: শামীনা শাজনীন কুইন।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলায় বিশ্বের সর্বাধুনিক মিনি রিসার্কুলেশন অ্যাকোয়াকালচার (মিনি আরএএস) প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘরের ভিতরে ট্যাঙ্কের মধ্যে করা হচ্ছে মাছ চাষ। উপজেলার পোনা গ্রামের মোহাম্মদ জব্বার শেখ এর ছেলে মোহাম্মদ রনি শেখ ইউটিউবে ভিডিও দেখে এ ব্যাতিক্রমধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। 

প্রকল্পটিতে প্রাথমিক পর্যায়ে ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে রনি একটি টিন সেডের ঘরে এক হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি ট্যাংকে তিন হাজার শিং মাছের পোনা ছেড়ে এ উদ্যোগ শুরু করেন। পানি উত্তলনের জন্য বসানো হয়েছে একটি পাম্প ও একটি আইপিএস। ফিল্টারিং এর জন্য রয়েছে চারটি টি ড্রাম। 

রনি জানান, ‘এখানে আমি আট থেকে দশ হাজার মাছ চাষ করতে পারব। এই মাছ বিক্রির উপযোগী হতে পাঁচ মাস সময় লাগবে। যেহেতু আমার একটা মাছও মারা যায়নি তাই আমি আশাবাদি যে লাভবান হব।’ 

এই ব্যাতিক্রমধর্মী উদ্যোগ দেখতে প্রতিদিনই অনেক মাছ চাষী তার বাড়িতে আসেন। তারাও এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী। স্থানীয় এক মাছ চাষি আব্দুর রহিম বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে লাভবান হওয়া যায়। কিন্তু প্রথম পর্যায়ের খরচটা একটু বেশি। এছাড়া ব্যাংক লোন পাওয়া খুবই জ়টিল ব্যাপার। লোন পাওয়া গেলে আমিও এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করবো।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস অফিসার শাহজাহান সিরাজ জানান, ‘মৎস সেক্টর বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপুর্ণ সেক্টর। এদেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পুরনের পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে এ খাত। আমরা আগামী তিন বছরের মধ্যে কাশিয়ানি উপজেলাকে বাংলাদেশের প্রথম আদর্শ মৎস উপজেলা বানানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ 

মাছ চাষের যত রকমের দিক আছে তার সবদিক হতে কাশিয়ানি হবে স্বয়ংসম্পূর্ন এবং যেসকল তরুণ উদ্যোক্তা রনি শেখের মতো মাছ চাষে আগ্রহী তাদেরকে ঋণ সহায়তার ব্যাপারেও আশ্বস্ত করেন তিনি। 

রনির এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগকে প্রশংসা জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির রহমান বলেন, ‘রনির এই উদ্যোগ দেখে অনেকেই এ খাতে আগ্রহী হবে। আমরা গত ১২ অক্টোবর বেকারত্ব দূরীকরণে মৎস্য সেক্টর ও উদ্যোত্তা তৈরি শীর্ষক একাটি সেমিনার এর আয়োজন করেছিলাম যেখানে উপজেলার নতুন তরুণদের কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ মাষ করা যায় তার ধারণা প্রদান করা হয়। এর দ্বিতীয় পর্ব গত ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সেরা ১০ পরামর্শদাতা উদ্যোক্তাকে ব্যাংক লোন প্রাপ্তিতে সহায়তা করা হয়।’ 

জমি না থাকার কারণে অনেকের মাছ চাষের ইচ্ছা থাকলেও তা করে উঠতে পারে না। তাদের ব্যাপারটি মাথায় রেখে বাংলাদেশে মিনি আরএএস প্রযুক্তি এনেছে জ্যাক ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় শিং, দেশি মাগুর, হাইব্রিড মাগুর, তেলাপিয়া, পাবদা, ভেটকি, গোলসা ও পাঙ্গাশ মাছ চাষ করা সম্ভব।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এ প্রযুক্তিতে প্রথম মাছ চাষ শুরু করেন ময়মনসিংহের ফিশ হ্যাচারী ও কালচার ফার্ম এগ্রো থ্রি এর মালিক এবিএম শামসুল আলম বাদল।

আরও পড়ুন