মানব সেবায় বাঁধন খুবি ইউনিট
মোঃ সাকিফ আকবর | প্রকাশ: ২৪ মে ২০২২
খুলনা মহানগরীর গল্লামারি এলাকার বাসিন্দা সালামত আলি। সারাদিন রিকশা চালিয়ে নয় সদস্যের পরিবার চালানো তার জন্য কষ্টকর। জানুয়ারির কনকনে ঠান্ডায় ভেবে কুল পাচ্ছিলেন না এই তীব্র শীতের মোকাবিলা করবেন কিভাবে। এমন সময় পাশে এসে দাঁড়ায় বাঁধন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ইউনিট।
‘বাঁধন খুবি ইউনিট স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন। ২০০৬ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী রক্তদানে মানুষকে উৎসাহিত করা ও অন্যান্য সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্য সামনে রেখে ‘বাঁধন’ এর অঙ্গ সংগঠন হিসেবে খুবিতে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। তাদের স্লোগান “একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন”।
রক্তদান মুখ্য উদ্দেশ্য হলেও বিভিন্ন সামাজিক কাজে সারাবছর ব্যস্ত সময় কাটে বাঁধন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীদের। রক্তদানের পাশাপাশি তারা বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, দুস্থ মানুষদের শীতবস্ত্র বিতরণ, মাদক বিরোধী আন্দোলন ইত্যাদি কার্যক্রম পালন করে থাকেন।
২০২০ সালে তারা বন্যা কবলিত মানুষের সাহায্যে ছুটে গিয়েছে। সে বছর বাঁধনের তরফ থেকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামে বন্যা কবলিত প্রায় ৩৫০ জন মানুষের ঔষধ, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্যালাইন ও সাধারণ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাঁধন খুবি ইউনিটের বর্তমান সভাপতি ডানা শিকদার জানান, অন্যসব সংগঠনের থেকে বাঁধনের চিন্তা-ভাবনা পুরোপুরি ভিন্ন। অন্য সংগঠনগুলো যেখানে চায় তাদের সংগঠন, সংগঠনের কার্যক্রম দীর্ঘদিন চলমান থাকুক, সেখানে বাঁধন চায় তাদের এই সংগঠনকে একসময় আর রক্ত যোগাড় করতে হবে না। বরং, একদিন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ তার রক্তের গ্রুপ জানবে এবং স্বেচ্ছায় রক্তদানে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
করোনা মহামারীর সময়েও বাঁধনের কার্যক্রম থেমে ছিল না। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকাকালীন সময়েও তারা প্রতিদিন প্রায় ১০ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করে গেছে।
করোনাকালে সংগঠনের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে বাঁধন খুবি ইউনিটের তৎকালীন সভাপতি নিলয় কুমার সরকার বলেন, ‘করোনার সময়টাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমাদের সিংহভাগ রক্তদাতাই বাড়িতে অবস্থান করেছেন। তবে আমরা আগেই স্থানীয় রক্তদাতাদের একটি তালিকা তৈরি করে রেখেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকাকালীন আমরা এসব রক্তদাতা থেকে রক্ত সংগ্রহ না করার চেষ্টা করি যেন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে তাদের মাধ্যমে রক্ত সরবারহ করতে পারি। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকাকালীন আমরা এই স্থানীয় রক্তদাতাদের মাধ্যমেই রক্ত জোগাড় করে গেছি।’
করোনাকালীন সময়ে সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম কেবল রক্তদান ও রক্ত যোগাড় করে দেবার মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখেনি। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় তহবিল সংগ্রহের কাজে বড় ভূমিকা রেখেছে বাঁধন খুবি ইউনিট। সে সময় তারা অক্সিজেন সরবরাহ করেছেন।
এ বিষয়ে সংগঠনের জোনাল প্রতিনিধি শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ মুন্না বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে আমরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় অক্সিজেন সরবরাহ করেছিলাম। শুরুতে আমরা নিজ অর্থায়নে তিনটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে সক্ষম হই। পরবর্তীতে শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অনর্থ সহায়তায় ২৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করেছিলাম।’
বাঁধন খুবি ইউনিটের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল তা জানতে চাইলে সংগঠনটির প্রাক্তন সদস্য ও বর্তমানে বাঁধনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের উপদেষ্টা মো. সোহেল সরওয়ার জাহান বলেন, এর আগে রোটার্যাক্ট ক্লাব খুবিতে রক্তদান ও জোগাড় সম্পর্কিত বিষয়গুলো পরিচালনা করত। তবে কয়েকজন শিক্ষার্থী এ বিষয়গুলো সামলানোর জন্য একটি স্বতন্ত্র সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সেই জায়গা থেকেই কেন্দ্রীয় বাঁধনের অঙ্গসংগঠন হিসেবে বাঁধন খুবি ইউনিট যাত্রা শুরু করে।