মানবিক সংকটে লেবানন
দোলা রাণী শাহা। প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনা মহামারি, অর্থনৈতিক মন্দা,অতঃপর ভয়াবহ বিস্ফোরণ সব মিলিয়ে লেবাননের রাজধানী বৈরুত এখন মানবিক সংকটের মুখোমুখি।
দ্য টেলিগ্রাফ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, শহরের নিকটবর্তী বন্দরে এই বিস্ফোরনে প্রায় ৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে, আহত ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং প্রান গেছে প্রায় ১০০ জনের। গৃহযুদ্ধ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক মন্দা,জাতির দুর্দশার সারিতে নতুন যোগ হলো বিস্ফোরণের এই ঘটনা।
এনজিও ওয়ার্ল্ড ভিশন লেবাননের ফিল্ড অপারেশন ডিরেক্টর রামি শামমা সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, বিদ্যমান মানবিক সংকটে বিস্ফোরণের এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দেশটিকে ভোগান্তি পোহাতে হবে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের তিনটি সংকট রয়েছে- সিরীয় শরনার্থী সংকট, অক্টোবরে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক সংকট এবং ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া করোনার প্রকোপ।’ এই চলমান পরিস্থিতি উত্তোরণের সম্ভবনা নিয়ে তারা নিজেরাই উদ্বিগ্ন রয়েছেন বলে জানান।
লেবাননের সেভ দ্য চিল্ড্রেনস কান্ট্রির আরেক পরিচালক বলেন, খাদ্যশস্য এবং জ্বালানী আমদানির অন্যতম এই বন্দর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারনে পরিবারগুলো অবিলম্বে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাবে।
এর আগে সেভ দ্য চিল্ড্রেনের প্রতিবেদন বলা হয়েছিল, বৈরুতের বহু সংখ্যক মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা পূরনে ব্যার্থ হবে এবং প্রায় ৫৬০,০০০ শিশুকে অনাহারে থাকতে হবে। আগামীতে যদিও অবস্থার পরিবর্তন আসতে পারত, কিন্তু লেবাননের আমদানিকৃত অধিকাংশ খাদ্যশস্য বন্দরের এই ভয়াবহ বিস্ফারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।
সরকারের দুর্নীতি বিরোধী প্রতিবাদ, কঠোর নীতিনিষ্ঠা, অক্টোবরে শুরু হওয়া অবকাঠামোগত সংকট দেশটিকে অসাড় করে দেয় যা প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির পদত্যাগকে মুখ্য করে তোলে।
বার বার সন্ত্রাসী হামলা ও প্রতিবেশী ইসরাইলের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এছাড়া লেবাননে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়া সিরীয় দ্বন্দ্ব, যা বৈরুত এবং আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে প্রভাব ফেলে। সিরীয় যুদ্ধের সুদূর প্রতিক্রিয়ায় ৪.৫ মিলিয়ন মানুষের এই দেশটিতে শরনার্থী সংখ্যা ১.৫ মিলিয়ন। বিভিন্ন সময়ে লেবানন এবং আন্তজার্তিক সংস্থাগুলো শরনার্থী প্রবেশে দেশটির অর্থনৈতিক এবং সামাজিক চাপের বিষয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন। মি.শামমা বলেন,বিস্ফোরণটি শরনার্থীদের উপর প্রভাব ফেলবে যারা দেশটিতে লকডাউনের সময়েও পরোক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন।
বিস্ফোরণে শরনার্থীদের বসবাসরত অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও এটি অবশ্যই দেশটির অর্থনৈতিক চাপ এবং বেকারত্বের হার বৃদ্ধি করবে বলে তিনি মনে করেন।বিস্ফারণটি বন্দরের নিকটবর্তী বেশ কয়েকটি হাসপাতালে আঘাত হানায় লেবাননের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি ।
ইউনিসেফ এর বরাত দিয়ে ইউনাইটেড নেশনস বলছে,বিস্ফোরনটি জনসাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের পাঠানো ১০ কন্টেইনার পিপিই সামগ্রী নষ্ট করেছে যা মহামারীর এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল।এছাড়া অনেক বাড়িতেই এখন খাদ্য ও বৈদ্যুতিক সংকট দেখা দিয়েছে।ওয়ার্ল্ড ফুড অরগানাইজেশনের সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে যে,লককডাউনের শুরু থেকেই খাদ্য নিয়ে চিন্তিত লেবানন এবং প্রতি দুইজনে একজন মানুষ পর্যাপ্ত খাদ্য না থাকায় দুশ্চিন্তা করছে।
একইসাথে বৃদ্ধি পেয়েছে কোভিড-১৯ এর সংক্রমন,দেশটিতে নতুন করে ২৫৫জন আক্রান্ত হয়েছে।এখন পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা ৭০ জন , সর্বমোট আক্রান্ত ৫,৬৭২জন এবং বিস্ফারণের আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে সংক্রমনের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
জরুরী সাড়া পেতে ইউনিসেফের কর্মকর্তা প্রাথমিকভাবে অর্থিক আবেদন জানিয়ে বলেছেন,এই মুহুর্তে ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব এবং মাস্কের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
লেবাননের মানুষের ভয়াবহ পরিস্থিতির উপর গুরুত্বারোপ করে ইউএন হিউম্যান রাইটস অফিস(OHCHR) সংকটকালীন সময়ে সহায়তা প্রত্যাশায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন।