Sunday, December 22, 2024
Sunday, December 22, 2024

দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে অধিক মনোযোগ দিতে হবে

মো. রুবায়েত হোসেন | প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২১

মো. রুবায়েত হোসেন

কথায় আছে,“অনভ্যাসে বিদ্যা ত্যাগ।“ অর্থাৎ শিক্ষার সংস্পর্শে না থাকলে মানুষের লব্ধ জ্ঞান ও বিস্মৃত হয়। একটি দেশের সামগ্রিক উন্নতি নির্ভর করে সেই দেশের শিক্ষাব্যাস্থার উপর। কারণ আজকের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করবে। তাই দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিকসহ সকল ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিতে গেলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে অধিক মনোযোগ দিতে হবে।

বর্তমানে সারা বিশ্ব এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। করোনা মহামারীর কারণে সারা বিশ্বের সকল গুরুত্বপূর্ণ খাতে এক বিরুপ প্রভাব পড়েছে। তার মধ্যে শিক্ষা খাত অন্যতম। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে উপনিত হয়েছে। সম্প্রতি ইউনেসকোর এক জরিপে দেখা গেছে, গত বছরের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় যাবত বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এ থেকেই বোঝা যায় এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে এসাইনমেন্ট ও অটোপ্রমোশন এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেনিতে উঠানো হয়েছে,যদিও সেটি কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে তা আলোচনা সাপেক্ষ।

অপরদিকে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে অনলাইনে সকল একাডেমিক কার্যক্রম চলছে। ক্লাস থেকে শুরু, এসাইনমেন্ট, পরীক্ষা সবই চলছে অনলাইনে।

কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব শিক্ষার্থীরা বাস করে তারা অধিকাংশই দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে ও ডিভাইসজনিত কারণে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমে সবসময় অংশগ্রহণ করতে পারছে না। ক্লাস, এসাইনমেন্ট থেকে শুরু করে অনলাইনে পরীক্ষা সবক্ষেত্রেই তারা অন্যদের থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে।

তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় আমাদের দেশে আপদকালীন ব্যবস্থা তথা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম যত বেশি প্রলম্বিত হবে শিক্ষাব্যবস্থায় ততবেশি গভীর ক্ষত সৃষ্টি হবে। কারণ বাংলাদেশ এখনও প্রযুক্তিগত ও ইন্টারনেট সুবিধার দিক থেকে অন্যান্য দেশের তুলনায় ঢের পিছিয়ে আছে।

আবার একটি দেশের শিক্ষাকাঠামো কতটা উন্নত ও যুগোপযোগী তা নির্ভর করে সেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর শিক্ষা ব্যাবস্থা ও শিক্ষার্থীদের অর্জনের উপর। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় হল একটি দেশের শিক্ষা কাঠামোর মানদন্ড। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ই বিভিন্ন অজুহাত ও নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে সিংহভাগ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী পড়াশোনা থেকে দুরে সরে গেছে। এতদিনে সে যা কিছু শিখেছিলো, তার অধিকাংশই ভুলে গিয়েছে শিক্ষার সংস্পর্শে না থাকার কারণে।

একটি জাতির অশিক্ষিত ও বর্বর হওয়ার প্রথম ধাপ এটিই। দেশের ভবিষ্যত নিয়ে যদি সরকার বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন হয়ে থাকে, তবে অবিলম্বে সকল বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া উচিত। ছাত্রসমাজ একটি দেশের অমূল্য সম্পদ। তাদের জন্য শিক্ষার সুযোগ তৈরী না করা হলে জাতি বিপথগামী হতে পারে।

পরিশেষে বলতে চাই, দেশের শিক্ষাখাতে যদি চিড় ধরে তাহলে তা জাতির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে। জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলব। তাই শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কথা অনুধাবন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিৎ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্যান্য খাতের ন্যায় শিক্ষাখাতেও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালুর বিষয়ে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন