খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যতিক্রমী দোকান ব্যবস্থা
শেখ রিফাত আলম | প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২২
খাবার বিক্রির হিসাব রাখছেন না দোকান মালিক। তবে হিসাবে ফাঁকি দিচ্ছেন না কোন গ্রাহক। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো খাবার খেয়ে হিসাব করে টাকা দিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছেন। এই চিত্র দেখা যায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ক্যাম্পাসের পরিচিত জায়গা তপন’দার দোকানে।
৩২ বছরে পদার্পন করা খুবি ক্যাম্পাসের সর্বাধিক পরিচিত স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম তপনের দোকান। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য অদম্য বাংলা’র পশ্চিম পাশে একাধিক ঝুপরি দোকানের দেখা মেলে এখানে। জায়গাটি সকলের আড্ডার প্রাণকেন্দ্র। এখানে তিনটি স্থায়ী ও বেশ কয়েকটি অস্থায়ী দোকান রয়েছে। এখানে মূলত সুলভ মূল্যে চা, কফি, শরবত, সিঙ্গাড়া, চটপটি সহ নানা মুখরোচক খাবার পাওয়া যায়।
বাঁশ ও টিনের তৈরি স্থায়ী দোকানগুলি সাইদুল, তপন এবং হুমায়ুন নামে পরিচিত। এর মধ্যে তপনের দোকানটি সব থেকে পুরাতন। ১৯৯১ সালে গড়ে ওঠা দোকানটিতে চা, শরবত, জুস, সিঙ্গাড়া ও বিভিন্ন ধরনের চপ পাওয়া যায়। হুমায়ুনের দোকানটিতেও একই ধরনের খাবার বিক্রি হয়।
তবে সাইদুলের দোকানটি কিছুটা ব্যতিক্রম। সেখানে চা-শরবত ও তেলে ভাঁজা খাবারের সাথে সন্ধ্যায় বারবিকিউ এর আয়োজন থাকে। এছাড়া অস্থায়ী দোকানগুলোর মধ্যে আছে লোকমান ভাইয়ের চটপটি ও ফুচকা, ইয়াসিন মামার আইসক্রিম এবং লোভনীয় সব আঁচার।
তবে দোকানে ব্যবসা বলতে সাধারণত যেরকমটা বোঝায় এখানে তার ব্যতিক্রম রয়েছে। শিক্ষার্থীরা কে কী খাবার নিচ্ছেন তা বিক্রেতারা কেউই হিসাব রাখেন না। কেননা এখানে দোকানী ও ক্রেতাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক অতুলনীয় বিশ্বাসের সম্পর্ক। শিক্ষার্থীদের চাহিদা মত দোকানীরা খাবার সরবরাহ করেন। কিন্তু কোন প্রকার হিসাব রাখার প্রয়োজন বোধ করেন না।
এই ব্যাপারে অজিত কুমার পাল ওরফে তপন’দা বলেন, “ছাত্রদের কেউ কোনদিন খেয়ে টাকা না দিয়ে যায়নি। তাদের উপর একশো ভাগ ভরসা আছে”। অন্য দোকান মালিকদের বক্তব্যও একই রকম।
শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, ক্লাসের ফাঁকে অবসর সময় কাটানো, বিকেল বা সন্ধ্যার আড্ডা কিংবা বিশেষ ঊপলক্ষ্যে সাইদুলের বারবিকিউ ট্রীট এসব কিছুর গন্তব্যস্থল তপন এলাকা।
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী নুহাশ মোর্তজা বলেন, “তপনের চা আর লোকমানের চটপটি ছাড়া ক্লাসের ফাঁকের সময় কাটানো চিন্তাই করা যায় না।”
“কোথায় যাস?” এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীদের মুখে হরহামেশাই শোনা যায় “তপনে যাই”। তপন এলাকায় অবস্থিত দোকানগুলি খুবি শিক্ষার্থীদের রোজকার জীবনে অবসর কাটানোর জায়গার হওয়ার সাথে সাথে তাদের সততারও সাক্ষ্য দেয়।