Sunday, December 22, 2024
Sunday, December 22, 2024

খুবির ফিটনেস সেন্টার নিজেই যখন আনফিট

নিশাত তামান্না মুমু | প্রকাশ: ২২ মে ২০২২

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চার কেন্দ্র সুলতানা কামাল জিমনেশিয়াম। ছবি: নিশাত তামান্না মুমু।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) খানবাহাদুর আহসানউল্লাহ আবাসিক হলের পাশে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ফিটনেস সেন্টার বা শরীরচর্চার কেন্দ্র সুলতানা কামাল জিমনেশিয়াম। এক তলা বিশিষ্ট এই ভবনটির দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলী নজর কাড়ে সবার। কিন্তু বছরের পর বছর ভবনটি পড়ে আছে অযত্নে আর অব্যবহৃত হয়ে। 

২০১৫ সালে শুরু হয়ে ২০১৬ সালের জুন মাসে এক কোটি চার লাখ ৯৬ হাজার ৪০৬ টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ শেষ হয় বর্তমান শরীরচর্চা কেন্দ্রটির। সেই থেকে এক রকম বন্ধই পড়ে আছে এটি। 

২০২১ সালের অক্টোবর মাসে শরীরচর্চার বেশকিছু সরঞ্জামাদি কেনা হয় কেন্দ্রটির জন্য। সেগুলোর মধ্যে আছে দুইটি ম্যানুয়াল ট্রেডমিল, দুইটি ডিজিটাল ট্রেডমিল, একাধিক স্টেশনারি বাইসাইকেল ও ডাম্ববেল। বর্তমানে এগুলোও পড়ে আছে অযত্নে আর অব্যবহৃত অবস্থায়। কেনার পরে প্রায় সাত মাস হয়ে গেলেও শরীরচর্চা কেন্দ্রটি বন্ধ থাকার কারণে এখনো পর্যন্ত একবারের জন্যও ব্যবহার করা হয়নি এই সকল সরঞ্জামাদির একটিও। 

খুবির সুলতানা কামাল জিমনেশিয়ামে অযত্নে পড়ে থাকা শরীরচর্চার সরঞ্জামাদি। ছবি: নিশাত তামান্না মুমু।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্রীড়া বিভাগে সফলতা দেখিয়েছে খুবি। বছরের শুরুতে ভলিবল, পর্যাক্রমে ক্রিকেট, ফুটবলসহ একাধিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় এই শিক্ষায়তনটিতে। কিন্তু এসকল খেলাধুলায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা কেন্দ্রে শরীরচর্চা করার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না। 

এই বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজিফ নাহিয়ান অন্তিক বলেন, ‘গত চার বছরে একদিনও জিমনেশিয়াম চালু দেখিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুন্দর শরীরচর্চা কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও টুর্নামেন্ট চলাকালীন আমাদের বাইরে যেতে হয় শরীরচর্চার জন্য।’ 

সকল সরঞ্জামাদি প্রস্তুত থাকলেও কেনো শরীরচর্চা কেন্দ্রের কার্যক্রম চালু হচ্ছেনা এমন প্রশ্ন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক আহসান হাবিব শিমুল জানান, ‘২০২১ সালে দায়িত্ব নেবার পরই আমি জিমনেশিয়ামে নতুন সরঞ্জামাদি আনয়ন ও এগুলো যেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শীঘ্রই ব্যবহার করতে পারেন তার প্রক্রিয়া শুরু করি। কিন্তু ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরন্তু অবকাঠামো উন্নয়ণমূলক প্রকল্পের অধীনে শরীরচর্চা কেন্দ্রটিরও উন্নয়ণমূলক প্রকল্প স্বাক্ষরিত হয়। ফলে বর্তমান জিমনেশয়ামের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘উন্নয়ণমূলক প্রকল্পে বর্তমান শরীরচর্চা কেন্দ্রকে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ভবনের সাথে একত্রিত করে পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই শিক্ষক-শিক্ষার্ত্থীরা জিমনেসশিয়ামে শরীরচর্চা করতে পারবেন বলে আশা রাখি।’ 

প্রকল্পটির সম্পূর্ণ কাজ সফলভাবে শেষ করার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ মাস এবং বাজেট নির্ধারিত হয়েছে ২৩ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। প্রকল্পটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। 

চুক্তি অনুযায়ী তিন হাজার ১০০ বর্গমিটারের এই শরীরচর্চা কেন্দ্রে থাকবে হ্যান্ডবল কোর্ট, ৫০৮ জনের বসার গ্যালারি, শরীরচর্চা কেন্দ্র, ইনডোর গেমস্ কাম স্টুডেন্ট ক্যাম্পিং, ডাইনিং ও ম্যাচ অফিসিয়ালদের কক্ষসহ অন্যান্য আধুনিক সুবিধা। শরীরচর্চা কেন্দ্র ভবনের উপরে থাকবে আট হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাংক। 

একই সাথে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য ৫০০ কিলো ওয়াট বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি থাকবে ১০০ কিলো ওয়াট জেনারেটর সুবিধা। ইতোমধ্যেই শরীরচর্চা কেন্দ্রটির উপরন্তু উন্নয়ণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। 

এদিকে কিছুদিন যাবত শরীরচর্চা কেন্দ্রটির অবকাঠামোগত দুর্বলতাও চোখে পড়ছে। গত ৩ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। তখন পুরো শরীরচর্চা কেন্দ্রে বৃষ্টির পানি ঢোকে। যার ফলে শরীরচর্চার সরঞ্জামাদিও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার নিরাপত্তার অভাবে সেখান থেকে পরপর তিনটি পানির মটর চুরি হয়েছে বলেও জানা গেছে।

আরও পড়ুন