Friday, April 11, 2025
Friday, April 11, 2025

কেমন ছিল করোনাকালীন অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা?

কাজী শাহরিয়ার রহমান | প্রকাশ: ১৭ মে ২০২২

করোনার ভয়াল থাবা শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেয় ‘অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা’ নামে নতুন একটি শিক্ষাব্যবস্থার সাথে। কিন্তু সকল শিক্ষার্থীদের জন্য তা সুফল বয়ে আনেনি। মুখোমুখি হতে হয়েছে কিছু প্রতিবন্ধকতার। 

অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছেই নতুন। এটি সম্পূর্ণরুপে ডিভাইস এবং ইন্টারনেট নির্ভর একটি শিক্ষাব্যবস্থা। ২০২০ সালের প্রথম দিকেই করোনা সংক্রমণ অনেক বেড়ে যায় বাংলাদেশে। পুরো দেশ চলে যায় লকডাউনে। মন্থর হয়ে যায় জীবনযাত্রার গতি, পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষাব্যবস্থা। এ অবস্থায় সবথেকে পিছিয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।

করোনাকালে শিক্ষাব্যবস্থাকে সচল রাখার জন্য অনলাইনে পাঠদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দেড় মাসের মাথায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করলেও দেরিতে শুরু করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং পরীক্ষা অনেকটা সময় পরে সম্পন্ন হওয়ায় পিছিয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।

অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে নর্দান ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস এন্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী কাজী আবিদুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘করোনাকালীন লকডাউনের মাস দেড়েক পরই অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনলাইনে প্রথমদিকে বুঝতে কিছুটা সমস্যা হলেও পরে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি এবং যথাসময়েই আমরা স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করেছি।’

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন থেকে সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থী খন্দকার নাইম ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি টার্ম অনলাইনে পরীক্ষা দিয়েছি। অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের কাছে নতুন হওয়ায় প্রথম প্রথম ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখতে এবং নেটওয়ার্কজনিত কিছু সমস্যা হলেও পরে তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। স্নাতক ডিগ্রী শেষ করতে প্রায় ১ বছর সময় বেশি লেগেছে। অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম আরো আগে শুরু হলে এবং পরীক্ষা সম্পন্ন করলে হয়তোবা এই বেশি সময় লাগতোনা।’

এদিকে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থায় সব থেকে বৈষম্য দেখা যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ২০২০ সালের ২৭ আগষ্ট অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও সারা দেশের সকল কলেজে ক্লাস হয়নি সমানভাবে। এই বিষয়ে সরকারী বিএল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম অনিক জানান, ‘আমরা অনলাইনে খুব বেশি ক্লাস করিনি এবং কোনো পরীক্ষা দেইনি। অনেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস নিলেও আমাদের অনলাইন ক্লাস খুব বেশি হয়নি। এতে আমরা আরও পিছিয়ে গিয়েছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো সব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হলে আমরা পিছিয়ে পড়তাম না।’

একই কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কাজী সিয়াম জানান, ‘প্রায় দেড় বছরের লকডাউনে পড়ালেখা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। এই সময়টাতে অনলাইনে ক্লাস বা পরীক্ষাগুলো নিয়মিত হলে পড়ালেখার মধ্যেই থাকতাম এবং যথাসময়ে স্নাতক ডিগ্রী শেষ করতে পারতাম।’

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো পাবলিক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলাতেও যদি দ্রুত পরিসরে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা চালু হতো তবে ইন্টারনেট সংযোগ ও ডিভাইসজনিত কিছু সমস্যা থাকলেও তা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে পারত শিক্ষার্থীরা। এতে তারা যথাসময়ে পড়াশোনা সম্পন্ন করতে পারতো। যার ফলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও ক্ষতিগ্রস্ত হতো না।

তাছাড়া করোনা মহামারী যেহেতু অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে তাই পরবর্তীতে করোনা বা অন্য কোনো মহামারীতে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বেনা এবং অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে এবং শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিনির্ভর হতে পারবে বলে আশা সবার।

আরও পড়ুন