কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সাংবাদিকতার মধ্যকার সম্পর্ক হোক সহাবস্থানের
জি. এম. জাহাঙ্গীর আলম | প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২২
‘ইন্টারনেট অব থিংস’ বা ইন্টারনেট ও মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে পারিপার্শ্বিকতা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার এই যুগে মানুষের জীবন যেমন হয়ে উঠেছে স্বাচ্ছন্দ্যময় তেমনি বিপরীতে চিন্তাযুক্ত।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বহুল আলোচিত ক্ষেত্র আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্ট (এআই) প্রাযুক্তিক উৎকর্ষের শিখরে পৌছলেও মানুষের সাথে সংঘর্ষের (বুদ্ধি ও প্রয়োগগত) সম্ভাবনায় এআইকে কতটুকু স্বাগত জানানো হবে সেটা নিয়ে দ্বিধা নিশ্চয় এখনো কাটেনি।
মানুষের কাজ যখন যন্ত্র করে দিতে সক্ষম তখন সময়ের সাথে মানুষের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসা স্বাভাবিক। কেননা পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা এমন লোভনীয় সুযোগ সহজেই লুফে নেবে তা খুবই অনুমেয়। অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবে সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষ। প্রশ্ন হল সাংবাদিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব কি একই রকম হবে?
খেলাধুলার আপডেট, আবহাওয়া খবর, শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন ও কর্পোরেট বিজনেস বিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনে কম্পিউটার ইতিমধ্যে বেশ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে। জিআইজেএন’র এক প্রতিবেদনে মারিয়া তেরাসা রন্দেরোস উল্লেখ করেছেন উপরিউক্ত কাজগুলো অত্যন্ত দক্ষতা ও বুদ্ধিদীপ্ততার সাথে সম্পন্ন করতে পেরেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কম্পিউটার।
তিনি আরও বলেন, প্রথাগত উপায়ে সাংবাদিকরা স্বল্প কয়েকটি সোর্স ব্যবহার করে সংবাদ তৈরীতে সক্ষম হলেও এআই সাইবার স্পেসে থাকা সকল তথ্যকে সংগ্রহ, বাছাই, বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনের মত জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজটি অতিদ্রুততায় সম্পন্ন করতে সমর্থ হয়েছে।
তবে এআই সাংবাদিকদের অস্তিত্ব সংকটের মত পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে না বলে ধারণা অনেক বিশ্লেষকের। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার অধ্যাপক ফ্রান্সিস্কো মারকোনিকে উদ্ধৃত করে সাংবাদিক নঈম তারিক তাঁর এক আর্টিকেলে লিখেছেন, বর্তমানে সাংবাদিকরা যা কাজ করেন তার আট থেকে বার শতাংশ কাজ যন্ত্র দিয়ে করানো যেতে পারে।
অবশ্য এই বক্তব্যের পেছনে যথেষ্ট যুক্তিও বিদ্যমান। সাইবার স্পেসে বিদ্যমান সকল তথ্য ও অ্যালগরিদম প্যাটার্ন সবসময় সঠিক নয়। সুতরাং যন্ত্র দ্বারা একটা প্রতিবেদন তৈরী হলেও সেটা একজন সাংবাদিককে পূর্নীরক্ষণ করতেই হবে। সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতার প্রয়োগক্ষেত্রগুলো যন্ত্রের পক্ষে আত্মস্ত করা সম্ভব নয়।
তাহলে এআই’র সাথে সাংবাদিকতার সম্পর্ক কেমন হতে পারে? সেটা হতে পারে সহাবস্থানের। ডেটা জার্নালিজমের গুরু দায়িত্বটা যন্ত্রের উপর ছেড়ে দিয়ে অধিকতর বিশ্লেষণধর্মী রাজনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলোতে গুরুত্বারোপ করতে পারেন সাংবাদিকরা।
করোনাকালে অতিরিক্ত তথ্যের চাহিদা পূরণে গণমাধ্যম ছিল সচেষ্ট। ফলে ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্যের ছড়াছড়িও কম হয়নি। ক্রস চেকিং বা ফ্যাক্ট চেকিং এর ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ফলে এআইকে হুমকি মনে করার কোন কারণ নেই। মানুষ ও যন্ত্রের বুদ্ধির মেলবন্ধনই আগামীর সাংবাদিকতা হয়ে উঠবে আরও নান্দনিক, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।
লেখক: জি. এম. জাহাঙ্গীর আলম, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।