কাজ করা ব্যক্তিদের জন্যেও ভাইরাস আর্থিক ব্যাথার কারণ
বিশু দাশ। প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২০
করোনা মহামারিতে সারাবিশ্বে বেড়ে গেছে বেকারত্বের হার। যেকোন সময় চাকরিচ্যুত হচ্ছে হাজার হাজার কর্মী। আবার অনেকের কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে বেতন, থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে চাকরি প্রদত্ত বিভিন্ন সুবিধা। অনেক কর্মীকে দেওয়া হচ্ছে অস্থায়ী বেতন। আবার অনেকে আতঙ্কিত, কখন হারিয়ে যায় তার চাকরি! তবে এতো কিছুর মধ্যেও স্বস্তির বিষয় হল, অনেকেই ফিরে পাচ্ছেন তাদের হারানো চাকরি।
চাকরি ফিরে পাওয়া লিসা হডলস্টনের মেজাজ এখন খানিকটা ফুরফুরে। ইন্ডিয়ানার একটি ক্যাসিনোতে রান্নার কাজ করতেন তিনি। করোনা ভাইরাসের কারনে সৃষ্ট মহামারিতে সাময়িক চাকরিচ্যুত হন হডলস্টন। দীর্ঘ তিনমাস পর কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসতে পেরে তিনি প্রায় ৩০ মিলিয়ন আমেরিকানদের মধ্যে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন। এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন তাদের জন্য, হঠাৎ করে সৃষ্ট বেকারত্বে কর্মহীন হয়ে যারা সহয়তার জন্য লড়ছেন।
তবে চাকরি ফিরে পেয়েও হডলস্টনের আর্থিক ঝামেলা খুববেশি কমেনি। কারন কর্মক্ষেত্র থেকে কর্তৃপক্ষ তার শিডিউলের চার দিন কমিয়ে দিয়েছে যার কারনে তার মাসিক বেতন ৩০০ ডলার কমে গেছে৷ এই সামান্য বেতনেই তাকে সকল খরচ (ভাড়া, গাড়ি ভাড়া, অন্যান্য) নির্বাহ করতে হচ্ছে।
হডলস্টন বলেন, ‘আমি শিডিউলের নির্ধারিত দিনগুলোতেই ক্যাসিনোতে যাব এবং অন্যান্য দিনগুলোর তুলনাই অবশ্যই ভালো করতে পারবো।’
হাডলস্টন এমন এক শ্রেণীর মানুষ যাদের আসলে বেকার বলা চলে না। কারন তাদের পূর্বের আয় ছিল ৬০০ ডলার, যেটা এখন অনেক কমে গেছে যার কারনেই আর্থিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। করোনা মাহামরিতে তাদের এক বিশেষ ধরনের আর্থিক লড়াইয়ের মুখে পড়তে হয়েছে।
আমেরিকান ইকোনোমিক পলিসি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ এলসি গোল্ড বলেন, এই মহামারি অর্থনীতিকে ডুবিয়ে দিয়েছে। লকডাউনের কারনে বন্ধ রয়েছে ব্যবসা-বানিজ্য, ভ্রমণ, কেনাকাটা। সংক্রমণের কারনে এলাকাবাসী চিন্তিত হওয়ায় এগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার তরঙ্গ আমেরিকার শ্রম শক্তির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল যার কোন কার্যকরি দৃষ্টান্ত দেখা যায়নি। অনেক গ্রাহক মনে করছেন চাকরি রাখুন বা না রাখুক সাধারণ ব্যয় নির্বাহ হওয়ায় অর্থনীতির চালিকা শক্তি হওয়া উচিৎ।
এলেন বোদ্রিও, ম্যাঞ্চেস্টারে বসবাসরত ৫৯ বছর বয়সী একজন হিসাব রক্ষক। ছয় সপ্তাহ আগে যখন তিনি চাকরি হারান তখন থেকে নিজেকে মিতব্যয়ী হিসেবে পরিচালনা করতে শুরু করলেন। তার স্বামী ডেভিড একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান। তিনিও চাকরি হারিয়ে চার সপ্তাহ অবরুদ্ধ ছিলেন জুলাই মাসে পুনরায় তিনি চাকরিতে বহাল হন। কিন্তু সেখানেও তার সিডিউওল থেকে চার দিন কমিয়ে দেওয়া হয়। তার স্বামী একটি নতুন টেলিভশন চায় এবং বাড়িতে একটি প্রজেকশন মডেল স্থাপন করতে চন। তাছাড়া তাদের ১৫ বছরের ছেলে তজু এবং পশু চিকিৎসকের বিভিন্ন ব্যয় সামলানোর সম্ভাবনা নিয়েও তারা বেশ চিন্তিত। বর্তমানে কাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আমেরিকার সকল শ্রেণীর কর্মীরা ব্যাকুল।
আটলান্টায় সিরনরিস মিচেলকে কাজের সময়কালে ডায়াবেটিসের ওষুধের জন্য অর্থ সঞ্চয় করতেন। তার এই সঞ্চয়পত্রের জন্য তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। মিচেল ইউনাইটেড ওয়েতে সংযুক্ত একটি গৃহহীন পরিসেবা সংস্থা “হোমস অফ লাইটের” সহায়তায় তার সঞ্চয়পত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন। করোনভাইরাসের কারণে তার খণ্ডকালীন অফিসের কাজটি হারিয়ে যায়। তিনি “হোম-অফিস-ক্লিনিং” সংস্থার সাথে পুরো সময় কাজ করতেন, কিন্তু ৫০ বছর বয়সী মিশেল এখন সপ্তাহে মাত্র কয়েক ঘন্টা কাজ করার সুযোগ পান।
‘যেহেতু আমি আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করি তাই এটা যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন আমি আর অন্য কাজ খুঁজে পাই না, এটি আমার উপর একটি বড় প্রভাব ফেলে। তারপরে নিজেই যখন ডায়াবেটিস এর রোগী হয়ে গেছি তখন একবারে সমস্ত কিছু মোকাবেলা করা বেশ শক্ত হয়ে উঠেছে’ বলেন মিচেল।
কর্মসংস্থানের আর্থিক চাপ এক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। যার কারণে বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। সরকার বলেছে, আমেরিকায় প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ কাজের বাইরে রয়েছেন। তবে জুলাই মাসে ১.৮ মিলিয়ন চাকরি যুক্ত করা হয়েছে, এটি আগের দুই মাসের লাভের প্রমাণ এবং পুনরুত্থিত করোনভাইরাস নিয়োগকে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং যে কোনও অর্থনৈতিক প্রত্যাবর্তন ঘটছে তার প্রমাণ। গত তিন মাসের নিয়োগের ফলে মহামারী-প্রবণতা মন্দাতয় হ্রাস পেয়েছে ৪০% এরও বেশি চাকরি।