Friday, April 18, 2025
Friday, April 18, 2025

করোনায় খুবির দুই শিক্ষার্থীর উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

জেবুন্নেসা যুথী | প্রকাশ: ৭ এপ্রিল ২০২২

ছবি: লিন্তি খাতুন ও আল আমিন।

করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করলে অনিদৃষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘর বন্দী হয়ে পরে লাখো শিক্ষার্থী। এই অলস সময়কে ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে অনেকে শুরু করেন অনলাইন ব্যবসা। নিজেদের সৃজনশীল কর্মদক্ষতা কে কাজে লাগিয়ে বনে যান ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। এমনই দুজন উদ্যোগী তরুণ লিন্তি খাতুন ও আল আমিন। তারা দুজনই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়ুয়া লিন্তি খাতুনের উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা শুরু ২০২০ সালে। তবে স্বপ্নের শুরুটা হয় ২০১২ সালে। সে সময় তিনি নবম-দশম শ্রেনীর ব্যবসায় উদ্যোগ বইয়ে সফল উদ্যোক্তাদের গল্প পড়ে বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত হন। কিন্তু তখন অনলাইন প্লাটফর্ম অপ্রতুল থাকায় উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না। তবে এখন চিত্রটা ভিন্ন। 

করোনার প্রকোপে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে তার সেই সুপ্ত স্বপ্ন আবারো জেগে ওঠে। লকডাউনের কোন এক অলস সময়ে হঠাৎ সন্ধান পান ‘উইমেন এন্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট’ (উই) নামে ব্যবসায়ীদের একটি ফেসবুক গ্রুপের। সেখানে বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের সফলতার গল্প তাকে অনুপ্রাণিত করে তোলে। 

এসবকিছু তার উদ্যোক্তা হওয়ার সেই ইচ্ছাকে আরো প্রবল করে তোলে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১৯ শে আগস্ট ‘লিন্তিস মিনিমাৰ্ট’ নামক একটি ফেসবুক পেজ খোলেন। শুরু হয় তার উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা। প্রথম দিকে তিনি এই পেজের মাধ্যমে শুধুমাত্র মধু বিক্রি করতেন। তারপর একে একে আরো যুক্ত করেন গাওয়া ঘি, চুইঝাল, আচার, মরিচা পাউডার, বাসক পাউডার, সরিষার তেল, নারিকেল তেল, বিভিন্ন ধরনের মশলাসহ নানা মৌসুমী জিনিস। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। 

‘লিন্তিস মিনিমাৰ্ট’ এর কিছু পণ্য। ছবি: সংগ্রহীত

এখন পর্যন্ত তিনি আনুমানিক পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি পণ্য বিক্রি করেছেন। এই পরিশ্রম তাকে আরো বড় অর্জন এনে দিয়েছে। বাংলাদেশের একমাত্র সরকারী তালিকাভুক ফেসবুক ই-কমার্স প্লাটফর্ম ‘উই’ হতে পেয়েছেন সম্মাননা ক্রেস্ট। নিজ কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আরো কয়েকজনকে কাজের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে লিন্তি খাতুন বলেন, “আমি চাই ভবিষ্যতে ‘লিন্তিস মিনিমাৰ্ট’কে দেশি পণ্যের একটি ব্রান্ড হিসেবে তৈরি করতে। একই সাথে দেশি পণ্যকে প্রসার ঘটাতে এবং বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে।” 

অপর উদ্যোক্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকিতে ভীষণ পারদর্শী। কাজ করছেন নিজের তৈরি কাঠের গয়না নিয়ে। কাঠের টুকরো দিয়ে তৈরি করেন মালা, কানের দুল, চুড়ি, আংটি সহ আরো অনেক রকমের গয়না। এর ওপর আলপনা এঁকে ফুটিয়ে তোলেন নান্দনিকতা। তিনি ‘ইয়োলো বি’ নামক একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। 

আল আমিনের উদ্যোগক্তা হওয়ার গল্পটা শুরু হয় তার ডিসিপ্লিন থেকে। প্রতি বছরের ন্যায় ২০১৯ সালে ডিসিপ্লিন থেকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দোকান দেওয়া হয়। সেখানে কাঠের গয়না বানিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে ছোট ছোট আকারের কাঠ আনা হয়। তিনি শখ করে একটি কাঠের টুকরোয় রঙ করেন এবং গলার মালা বানান। এরপর নিজেই গলায় পরে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ান। ছেলে হয়ে মালা পরায় বিষয়টা অনেকেরই নজর কাড়ে। সুন্দর আঁকাআঁকির জন্য অনেকের কাছ থেকে প্রশংসা লাভ করেন। মূলত সিনিয়র ভাই-বোন ও বন্ধুদের উৎসাহে ফেসবুকে কাঠের গয়নার পেইজ ‘ইয়োলো বি’ চালু করেন। 

‘ইয়োলো বি’ এর কিছু পণ্য। ছবি: সংগ্রহীত

এরপর মাস ছয়েক একাডেমিক কাজের চাপে অনেকটা ঢিমেতালেই চলছিল তার ব্যবসা। মহামারীর কারণে ২০২০ সালের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে বাড়িতে চলে যেতে হয়। শুয়ে-বসেই দিন কাটছিল তার। ঠিক তখনই আরেক উদ্যোক্তা তাহিরা মাহনাজ মীমের উৎসাহে আবারও শুরু করেন গয়না তৈরীর কাজ। এরপর পুরোদমে ব্যবসায়ী কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমানে ভালো অবস্থানে আছে তার এই ব্যবসা। প্রতিদিন কোনো না কোনো গয়নার অর্ডার থাকে। গুণগত মানসম্পন্ন গয়না সরবারাহ করে অসংখ্য গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে আল আমিন বলেন, “ইচ্ছা আছে গুণগত মান ঠিক রেখে আমার সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে আরো নানা ধরণের গয়না দিয়ে এই ক্ষুদ্র উদ্যোগকে সমৃদ্ধ করার।”

আরও পড়ুন