একাত্তরের নির্মমতার সাক্ষী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
আল আরাফ মাহেদী (প্রীতম) | প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২২
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বধ্যভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়। খুলনা মহানগরী থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক সংলগ্ন ময়ূর নদীর পাশে গল্লামারী এলাকায় এর অবস্থান।
১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা খুলনাতে অসংখ্য নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমি বানিয়েছিল। যার একটি গল্লামারী বধ্যভূমি। তৎকালীন সময়ে খুলনার ময়ূর নদীর তীরে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী একটি রেডিও স্টেশন স্থাপন করে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনটি বর্তমানে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভবন নামে পরিচিত। সেসময় এটি ১৮ কক্ষবিশিষ্ট একটি একতলা ভবন ছিল। বর্তমান অনিকেত প্রান্তর জুড়ে ছিল বিশাল এক রেডিও টাওয়ার। পাকিস্তান সৈন্যরা রেডিও সেন্টারের ভেতর অসংখ্য নর-নারীকে ধরে এনে পৈশাচিক নির্যাতন চালাত। এরপর হত্যা করে লাশ পার্শ্ববর্তী খালে ফেলে দিত।
অমল কুমার বাইনের লেখা ‘গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ: খুলনা জেলা’ বইতে তৎকালীন বেতার কেন্দ্রের ঘোষক হামিদুর রহমানের একটি উক্তি ছিল।
বইটিতে হামিদুর রহমান বলেন, ‘তখন বেতার কেন্দ্রে চাকরি করতে হতো মিলিটারি বেষ্টনীর ভেতর দিয়ে। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এনে পুলিশ ব্যারাকে রাখা হতো। তারপর সন্ধ্যা হলে সেই নিরীহ লোকগুলোকে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করা হতো। কিছুদিন পরে ফায়ারের পরিবর্তে জবাই করা হতো তাঁদের। সেই সময়ে কিছু বাঙালি রাজাকার এই দায়িত্ব নেয়।’
কালের বিবর্তনে পাক হানাদার বাহিনী যে রেডিও সেন্টারে ঘাঁটি গেড়েছিল সেটিও এখন নেই। খালটির অস্তিত্ব এখন খুঁজে পাওয়া ভার। স্বাধীনতার পর এই রেডিও সেন্টার (বর্তমান বাংলাদেশ বেতার, খুলনা কেন্দ্র) নগরীর নূরনগর এলাকায় স্থানান্তরিত হয়েছে। আর পুরনো সেই রেডিও সেন্টারের একতলা ভবনকে ঘিরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের এক টুকরো ইতিহাস খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। পাকিস্তান বাহিনী আর তাদের এ দেশীয় দোসরদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ভয়াল স্মৃতি হয়ে রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
নাম না জানা অসংখ্য শহীদের আত্মত্যাগের সাক্ষী হয়ে গল্লামারী বধ্যভূমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। এক সময়ে যেই স্থানে হাজারো মানুষের স্বপ্নকে হত্যা করা হয়েছে আজ সেই স্থানেই হাজার তরুণ-তরুণী তাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন বুনছে