অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম: যে মুদ্রার দু’পিঠেই টেল!
এ, বি, এম, রায়হানুল ফেরদৌস | প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২১
অনলাইনে ক্লাস চলছে। অন্ধকার ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপাশ থেকে একজন পড়াচ্ছেন। স্যারও আমাদের দেখছেন না। ইচ্ছা থাকলেও সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করা সম্ভব হচ্ছে না। একসময় ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে অন্য এপে ঢুঁ দিচ্ছি। হঠাৎ হঠাৎ স্যার নিজেও ডিসকানেক্ট হয়ে যান। শান্ত পরিবেশে ঘড়ির কাঁটার শব্দও বিরক্ত লাগে। তখন বুঝতে পারি না স্যারের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করবো নাকি ক্লাস আর হবে না!
অনলাইনে টানা একাধিক ক্লাসে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা আরও ভয়ানক। সবার ডিভাইস (ফোন, কম্পিউটার) সমানভাবে সক্ষম নয়। টানা ক্লাসে একে তো ডিভাইস পেরে ওঠে না সাথে যদি থাকে সাউন্ড ইস্যু! স্যার পড়াতে পড়াতে মাউথ পিস থেকে দূরে সরে গেলে শব্দ লো (নিচু) হতে শুরু করে। নেটওয়ার্কজনিত সমস্যায় শব্দ কেটে আসে। হেডফোন ব্যবহার করতে হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা লো ভয়েজে মনোযোগি হওয়ার চেষ্টাকে কখনও অত্যাচার মনে হয়েছে।
করোনা পূর্ব সময়েও আমরা অনলাইন কেন্দ্রিক ছিলাম। CR (Class Representative) ক্লাস-এসাইনমেন্ট বিষয়ক সর্বশেষ তথ্য, স্যার-ম্যাম প্রদত্ত প্রয়োজনীয় সফট কপি অনলাইন থেকেই সংগ্রহ করতাম। কিন্তু তা ছিল সীমার মধ্যে। অতিমাত্রায় অনলাইন কেন্দ্রিকতা সর্বনাশ ডেকেছে। হঠাৎ করে নতুন ব্যবস্থায় থিতু হওয়া কি যা তা ব্যাপার!
এসবের ভীড়ে ইতিবাতক কিছুই নেই, তেমনটা নয়। তবে যে পরিমান অর্থ-শ্রম-সময় ব্যয় করে এ কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছি তার আশানুরূপ ফল পাইনি। ক্ষেত্র বিশেষে প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের সমন্বয়হীনতার চরম অভাব অনুভূত হয়েছে। অন্তত: ফাইনাল পরীক্ষা অফলাইনে দিতে পারলে কিছু ভাল লাগা কাজ করতো। অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত পরীক্ষা নিয়ে এক অজানা ভয় কাজ করছে অনেকের ভিতরে। প্রশাসন যথেষ্ট তথ্য সরবরাহ করলেও তা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি পূরণে পূর্ণ কাজে আসছে না। তবে এটা সত্য যে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত পরীক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব অনেকটাই বেড়েছে যা বাড়তি চাপের কারণ! অর্থনীতিতে সুযোগ ব্যয় (Opportunity Cost) নামে একটি টার্ম আছে। এই অনলাইনে কার্যক্রম থেকে যতটুকু শিখেছি তার দ্বিগুণ ভুগেছি।
লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।